ক্যান্সারের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই চলছিল তার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পেরে ওঠেননি। সেই লড়াইয়ে হার মেনে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিলেন তরুণ কবি শ্বেতা শতাব্দী এষ।
শুক্রবার রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৩৩ বছর।
শ্বেতার মৃত্যুসংবাদ প্রথম জানান তার বড় বোন মন্দিরা শতাব্দী এষ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক আবেগঘন পোস্টে তিনি লিখেছেন— ‘আমার মণি আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। আর আমাকে দিদি ডাকবে না।’
এই পোস্ট ছড়িয়ে পড়তেই শোকাভিভূত হয়ে ওঠে কবি-সাহিত্য অঙ্গন। অনেকে তার কবিতার পঙক্তি উদ্ধৃত করে জানান শ্রদ্ধা, কেউ লিখেন স্মরণবাণী। অনেকেই বলছেন, শ্বেতা ছিলেন প্রতিরোধ ও সাহসের প্রতীক। অসুস্থতার মধ্যেও সৃজনশীলতায় এগিয়ে যাওয়ার অনন্য উদাহরণ।
১৯৯২ সালে জামালপুরে জন্ম শ্বেতার। জন্ম থেকেই তিনি বহন করছিলেন কঠিন রোগ বিটা থ্যালাসেমিয়া মেজর। নিয়মিত রক্ত নিতে হতো, শারীরিক দুর্বলতা ছিল সঙ্গী, কিন্তু থেমে থাকেননি তিনি। পড়াশোনায় যেমন ছিলেন দৃঢ়, তেমনি কবিতায়ও খুঁজে পেয়েছিলেন জীবনের শক্তি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
কিন্তু জীবনে আরও নির্মম আঘাত আসে কয়েক বছর আগে। ধরা পড়ে লিভার ক্যান্সার। চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে গিয়ে পরিবার পড়ে যায় চরম আর্থিক সংকটে। বন্ধুবান্ধব ও স্বজনদের উদ্যোগে একাধিকবার সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সর্বশেষ গত ৮ সেপ্টেম্বর কেমোথেরাপির জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় লিভার ফেইলিওরে মৃত্যু ঘটে তার।
অসুস্থতার শৃঙ্খল শ্বেতাকে কখনো আটকে রাখতে পারেনি। লিখেছেন একের পর এক কাব্যগ্রন্থ। ‘অনুসূর্যের গান’, ‘রোদের পথে ফেরা’, ‘ফিরে যাচ্ছে ফুল’, ‘আলাহিয়ার আয়না’ ও ‘বিপরীত দুরবিনে’। সর্বশেষ ২০২৫ সালের একুশে বইমেলায় বৈভব প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয় তার বই ‘হাওয়া ও হেমন্ত’। যেখানে জীবনের যন্ত্রণাকে অতিক্রম করে উঠে এসেছে অনমনীয় বেঁচে থাকার ইচ্ছা।
তরুণ এই কবির শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টায় ঢাকার বাসাবো কালীমন্দিরে।