একটি যুগান্তকারী গবেষণায় দেখা গেছে যে, গানের সুর বা ছন্দ শুধু আমাদের আনন্দই দেয় না, বরং এটি মুহূর্তের মধ্যেই আমাদের মস্তিষ্ককে গভীরভাবে নতুন করে সাজিয়ে তোলে। FREQ-NESS নামের একটি অত্যাধুনিক ব্রেইন-ম্যাপিং অ্যালগরিদম ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে, মস্তিষ্কের কার্যকলাপ কোনো একটি নির্দিষ্ট জায়গায় আটকে থাকে না। বরং, আমাদের মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলো এক অবিরাম ও গতিশীল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিজেদেরকে সবসময় নতুন করে গড়ে তোলে।
গবেষণায় যখন কিছু মানুষকে ছন্দের তালে তালে শব্দ শোনানো হয়, তখন তাদের মস্তিষ্কের কার্যকলাপের নিয়ন্ত্রণ এক নাটকীয় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। সাধারণত যখন আমরা অন্যমনস্ক বা কোনো কিছু নিয়ে ভাবি, তখন মস্তিষ্কের যে অংশটি সক্রিয় থাকে (ডিফল্ট মোড নেটওয়ার্ক), সেটি তার নিয়ন্ত্রণ ডান কানে শোনার জন্য নির্দিষ্ট অংশের (ডান অডিটরি কর্টেক্স) কাছে হস্তান্তর করে। এই পরিবর্তনটি সাধারণ সুইচ অন-অফ করার মতো ছিল না; নতুন অ্যালগরিদমটি মস্তিষ্কের কার্যকলাপকে তার কম্পাঙ্ক (ফ্রিকোয়েন্সি) অনুযায়ী আলাদা করতে পারে, যার ফলে বোঝা যায় মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ কীভাবে একসঙ্গে কাজ করছে।
গবেষকরা দেখেছেন যে ছন্দের সঙ্গে দুটি ভিন্ন ধরনের কার্যকলাপ তৈরি হচ্ছে: একটি সরাসরি ছন্দকে অনুসরণ করছিল, আর অন্যটি তার একটি অতিরিক্ত কম্পাঙ্কে সাড়া দিচ্ছিল। এই দুটি কার্যকলাপ মস্তিষ্কের সেইসব অঞ্চলে প্রভাব ফেলে, যেগুলো শব্দ, স্মৃতি এবং অনুভূতির সঙ্গে জড়িত।
আরও একটি দারুণ আবিষ্কার হলো, গামা ওয়েভস (যা সাধারণত জটিল চিন্তাভাবনার সময় তৈরি হয়) ধীর ছন্দের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করছিল। বিজ্ঞানীরা এটিকে “স্নায়বিক হ্যান্ডশেক” বলে বর্ণনা করেছেন, যার মাধ্যমে নতুন শোনা তথ্যগুলো আমাদের পুরোনো স্মৃতির সঙ্গে মিশে যায়।
এই গবেষণা প্রমাণ করে যে, গান শোনা কোনো নিষ্ক্রিয় কাজ নয়। এটি আসলে একটি সক্রিয় প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে আমাদের মস্তিষ্ক প্রতি মুহূর্তে নিজেকে বদলে নেয়। সংগীত এবং মানুষের চিন্তা-ভাবনার মধ্যে যে শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে, এই গবেষণা তা আরও স্পষ্ট করে তুলল।
সুতরাং, এখন থেকে আরও বেশি করে ভালো সংগীতের সুর ও ছন্দে মেতে উঠুন এবং নিজের মস্তিষ্কের পরিচর্যা করুন।