বৈরিতাকে পেছনে ফেলে এক হচ্ছে ভারত-চীন?

দীর্ঘদিনের সংঘাত ও বৈরিতাকে পেছনে ফেলে ভারত-চীন সম্পর্কের শীতলতা কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

দিল্লি সফররত চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সঙ্গে বৈঠকে সোমবার বলেন, আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক একটা কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছে। এখন আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। সেজন্য দুই দেশেরই উচিত খোলামেলা ও গঠনমূলক আলোচনা করা।

গালওয়ানে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে সংঘাতের পাঁচ বছর পর শত্রুতা ভুলে ভারত-চীনের কাছাকাছি আসার প্রধান তাগিদ যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি। রাশিয়া থেকে তেল কেনার ‘অপরাধে’ জরিমানা হিসেবে ভারতের রপ্তানির ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানোর ফলে মোট শুল্কের বোঝা বেড়ে হয়েছে ৫০ শতাংশ। ২৭ আগস্ট থেকে বাড়তি শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা।

ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্কের এ টানাপড়েনের দরুন ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে রাশিয়া ও চীনের দিকে ভারত ঝুঁকতে চাইছে। ওয়াং ই-এর ভারত সফরের পর এ মাসের শেষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চীন সফরে যাবেন এসসিও শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে।

চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে এগিয়ে চলার শর্ত হিসেবে জয়শঙ্কর ৩টি বিষয়ের উল্লেখ করেন। ৩টি বিষয়ই দুই দেশের পক্ষে জরুরি বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন, আমাদের কাছে ৩টি পাথেয় রয়েছে। পারস্পরিক শ্রদ্ধা, পারস্পরিক সংবেদনশীলতা ও পারস্পরিক স্বার্থ। মতপার্থক্য হতে পারে, তবে তা সংঘাত ও প্রতিযোগিতামূলক দ্বন্দ্বে পরিণত হওয়া ঠিক নয়।

জয়শঙ্কর বলেন, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে বৈঠকে সীমান্ত সংঘাতের বিষয়ে আলোচনা হবে। সীমান্ত যদি শান্তিপূর্ণ না থাকে, স্থিতাবস্থা যদি বজায় না থাকে, তাহলে সম্পর্ক ইতিবাচক হতে পারবে না। দোভালের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও ওয়াং ই দেখা করবেন প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে।

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গতি অব্যাহত রাখতে চীন ও ভারত একমত হয়েছে বলে গতকাল সোমবারের বৈঠক শেষে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা সিনহুয়া। জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকে ওয়াং ই বলেন, ভূরাজনীতি দ্রুত বদলে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নাম না করে সেই বদলানোর জন্য তাদের দায়ী ঠাউরে তিনি বলেন, একটি দেশের একতরফা জবরদস্তিই এর কারণ। ফলে মুক্তবাণিজ্য আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা তীব্র চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

ওয়াং ই বলেন, এ পরিস্থিতিতে ২৮০ কোটি জনসমষ্টির এই দুই দেশের উচিত বৈশ্বিক দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেওয়া। একতাই শক্তি। ঐকবদ্ধ হয়েই বহুমুখী পৃথিবীর উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোকে শক্তি সঞ্চয়ে অগ্রণী হতে হবে।

ওয়াং ই বলেন, চীন ও ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্বের মতৈক্য অনুযায়ী দুই দেশ সব পর্যায়ে সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। সীমান্ত স্থিতিশীল করেছে। শান্তি এনেছে। চীনের পবিত্র তীর্থ ক্ষেত্রে ভারতীয়দের যাত্রা আবার শুরু হয়েছে। সহযোগিতার দিকে দুই দেশ ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগোচ্ছে।

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এভাবেই পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের আধারে সহযোগিতার ক্ষেত্রে দুই দেশই উইন উইন পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। দুই দেশেরই উচিত আস্থার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়া, যা দুই দেশের পক্ষেই লাভজনক।

নয়াদিল্লি থেকে চীনা সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়, জয়শঙ্কর তার ভাষণে তাইওয়ানকে চীনের অংশ বলেছেন। এ দাবির সত্যতা কতখানি, তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চাওয়া হয়। যদিও দুপুর পর্যন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ওই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

Tags :

International News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025