পাবনার ফরিদপুর উপজেলায় বিএনপির পার্টি অফিসে বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) দিবাগত রাতে ককটেল বিস্ফোরণ, গুলিবর্ষণ ও ব্যাপক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। তবে এই হামলার পেছনে আওয়ামী লীগের সমর্থকদের হাত আছে বলে যে দাবি উঠেছে, স্থানীয় বিএনপির একটি বড় অংশ ও এলাকাবাসী তা মানতে নারাজ। তাদের দাবি, এটি দলের অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং ও আধিপত্যের লড়াইয়ের ফল।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাত আনুমানিক ১টার দিকে ৪-৫টি মোটরসাইকেলে ১৫-২০ জন যুবক এসে প্রথমে অফিসের সামনে পরপর তিনটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এরপর কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়ে তারা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে চেয়ার-টেবিল, ফ্যান, টিভি ভাঙচুর করে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ভাঙচুরের মধ্যেও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছবি একদম অক্ষত অবস্থায় রয়ে গেছে। এটিই এলাকায় সবচেয়ে বড় আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় বিএনপির একাংশের ভাষ্য, যদি আওয়ামী লীগ বা বাইরের কেউ হামলা করতো, তাহলে খালেদা জিয়ার ছবি ছিঁড়ে ফেলাই প্রথম কাজ হতো। কিন্তু ছবি অক্ষত থাকায় এটা স্পষ্ট যে, হামলাকারীরা নিজেদের লোকই ছিল। এটা গ্রুপিংয়ের রেষারেষি ছাড়া আর কিছু না।
দীর্ঘদিন ধরে ফরিদপুর উপজেলা বিএনপিতে দুটি প্রভাবশালী গ্রুপের মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্ব চলছে। এক পক্ষের নেতৃত্বে আছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলাম বকুল ও আব্দুল হাকিম গ্রুপ, অন্য পক্ষে জিয়াউর রহমান জিয়া গ্রুপ। কমিটি গঠন, সভা-সমাবেশের তারিখ নির্ধারণ, এমনকি কর্মসূচি পালন নিয়েও দুই গ্রুপের মধ্যে প্রকাশ্য সংঘাত লেগে থাকে। স্থানীয়রা মনে করছেন, বৃহস্পতিবার রাতের এই ঘটনা সেই চলমান দ্বন্দ্বেরই চূড়ান্ত রূপ।
তবে এই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের অভিযোগ সরাসরি উড়িয়ে দিয়েছেন জহুরুল ইসলাম বকুল। তিনি দাবি করেন, এটা পলাতক হাসিনার সমর্থক ও সন্ত্রাসীদের পরিকল্পিত হামলা। তারা গুলি করেছে, ককটেল ফুটিয়েছে, ভাঙচুর করেছে।
খালেদা জিয়ার ছবি অক্ষত থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, এটা আমাদের ভেতরের কোনো বিষয় না। এটা স্রেফ বাইরের লোকের হামলা।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ফরিদপুর থানার ওসি সাকিউল আজম জানান, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা নিশ্চিত। তবে গুলির বিষয়টি এখনও যাচাই করা হয়নি। সিসিটিভি ফুটেজ দেখা হচ্ছে। এখনও কোনও মামলা হয়নি। তদন্তের পরই বলা যাবে এটা অভ্যন্তরীণ না বহিরাগতদের কাজ।




