যেভাবে বিশ্বসুন্দরীর মঞ্চে বাংলাদেশের মিথিলা

বিশ্বের ১২১টি দেশের সুন্দরীদের মাঝখানে লাল-সবুজের প্রতিনিধিত্ব করছেন বাংলাদেশের তানজিয়া জামান মিথিলা। একসময় জেলা শহরের সাধারণ একটি মেয়ের স্বপ্ন ছিল শুধু নিজেকে গড়ে তোলা। আজ সেই মেয়েটিই দাঁড়িয়ে আছেন ৭৪তম মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার মঞ্চে।

গত সেপ্টেম্বরে ‘মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ ২০২৫’-এর মুকুট জয়ের পর থেকেই মিথিলার প্রস্তুতি, গ্রুমিং এবং বিশ্বমঞ্চে নিজেকে উপস্থাপনের প্রচেষ্টা ছিল চোখে পড়ার মতো। বর্তমানে তিনি থাইল্যান্ডে ১২১টি দেশের প্রতিযোগীর সঙ্গে বিভিন্ন কার্যক্রম, প্রশিক্ষণ ও গ্রুমিং সেশনে অংশ নিয়ে নিজেকে তুলে ধরছেন অনন্য উচ্চতায়। এবার মিস ইউনিভার্স ২০২৫ এর মঞ্চে সেই প্রস্তুতির ফল পাওয়ার অপেক্ষা। মিথিলা সেরা সুন্দরীর মুকুট ছুঁতে পারেন কিনা, তারই সিদ্ধান্ত হবে আগামীকাল।

জানা গেছে, মাত্র ১৬ বছর বয়সে বাল্যবিয়ে থেকে বেরিয়ে আসার সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মিথিলা। বুকের ভেতর মায়ের শেখানো সেই শক্তি আর সামনে অজানা শহর ঢাকা– সেখান থেকেই শুরু তাঁর জীবনের লড়াই।

মিথিলার মা বলেন, ‘ওর মধ্যে সৎসাহস আছে। সেই সাহসের জোরেই এগোচ্ছে ও। মাত্র ১৬ বছর বয়সে ওর বিয়ে দিতে চেয়েছিল ভাইয়েরা। সে রাজি হয়নি। আমি ওর পাশে ছিলাম। ওর কষ্ট আর সংগ্রামের জোরেই আজ এই অবস্থানে এসেছে। সঙ্গে আছে সবার দোয়া।’

মিথিলার যাত্রা শুরু মডেলিং অঙ্গন থেকে। ২০১৯ সালে ‘ফেস অব বাংলাদেশ’ ও ‘ফেস অব এশিয়া’ প্রতিযোগিতায় দেশের প্রতিনিধিত্ব করে তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ও ফ্যাশন হাউসগুলোর। একই বছর তিনি জেতেন ‘মিস সুপারন্যাশনাল বাংলাদেশ ২০১৯’ শিরোপা। যদিও ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের কারণে মূল প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়াতে হয়েছিল তাঁকে।

ফ্যাশনের পাশাপাশি অভিনয়েও নিজের উপস্থিতি জানান দেন মিথিলা। ২০১৯ সালে বলিউডে তাঁর অভিষেক ঘটে ‘রোহিঙ্গা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে, যেখানে একজন মানবিক কর্মীর চরিত্রে অভিনয় করে তিনি প্রশংসা কুড়ান। সামাজিক মাধ্যমে তাঁর লাইফস্টাইল, ফ্যাশন সেন্স ও আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি তাঁকে আলোচনায় রাখলেও কখনো কখনো বিতর্কও তৈরি করেছে।

অনলাইন ভোটিং শুরু হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশিদের অভাবনীয় সাড়া পেয়েছেন মিথিলা। কখনও সেরা দশ, কখনও সেরা পাঁচ, তারপর শীর্ষ তিন। অবশেষে পিপলস চয়েসে এক নম্বর। ৬ লাখেরও বেশি ভোট পেয়েছেন তিনি; যা পেছনে ফেলেছে বহু সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অভিজ্ঞ দেশগুলোর প্রতিনিধিদের। এই সংখ্যা শুধু ডিজিট নয়, এটি বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসার দৃঢ় উপস্থিতি।

মিথিলা বলেন, ‘এটি আমার জয় না, আমাদের সবার জয়। চলুন, একসঙ্গে ইতিহাস গড়ি।’

বাংলাদেশি দর্শক, মডেলিং অঙ্গনের সহকর্মী থেকে শুরু করে শোবিজ অঙ্গনের জনপ্রিয় তারকারা সক্রিয়ভাবে সমর্থন জানাচ্ছেন তাঁকে। জয়া আহসান, শবনম বুবলী, রুনা খান, মেহজাবীন, সাবিলা নূর, তাসনিয়া ফারিণ, জান্নাতুল পিয়া– অনেকে নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশের কোনো প্রতিযোগীর জন্য এর আগে এমন সম্মিলিত সমর্থন দেখা যায়নি।

মিস ইউনিভার্সের মঞ্চ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে মিথিলা বলেন, ‘পুরো দেশের ভালোবাসায় আমি আপ্লুত। মুকুট জিতলে আমৃত্যু দেশের জন্য ভালো কিছু করার চেষ্টা করে যাব।’

মিস ইউনিভার্স শুধু সৌন্দর্যের প্রতিযোগিতা নয়; এটি ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিমত্তা, সামাজিক সচেতনতা এবং বিশ্ব-দৃষ্টিভঙ্গির মূল্যায়ন করে। সেই জায়গায় বাংলাদেশকে কীভাবে উপস্থাপন করবেন, তা নিয়ে রয়েছে ব্যাপক আগ্রহ। গ্রুমিংয়ের অংশ হিসেবে তাঁকে শেখানো হয়েছে– মিডিয়ায় কীভাবে নিজেকে তুলে ধরতে হবে, প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে, রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিত্ব কেমনভাবে সামলাতে হবে। এসবের বাস্তব পরীক্ষা হবে গ্র্যান্ড ফিনালেতে।
মিথিলা বলেন, ‘এখানে আমি মিথিলা নই। এখানে আমি বাংলাদেশ। সবাই আমাকে বাংলাদেশ নামেই ডাকে। আমি জিতলে মুকুটটি বাংলাদেশের মানুষকে উৎসর্গ করব।’

মিথিলা আগেও ‘মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ’ খেতাব জিতেছিলেন। তবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। তিনি বলেন, ‘২০২০ সালে আমি মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ হলেও কভিডের কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেতে পারিনি। সেটি ছিল অপূর্ণতা। এবার সেই স্বপ্ন পূরণের সুযোগ পেয়েছি। আমি চাই পৃথিবী জানুক– বাংলাদেশ থেমে নেই। আমরা এগোচ্ছি সাহস ও মর্যাদা নিয়ে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি ভয় পাই না। আমার লক্ষ্য একটাই– বাংলাদেশের নামটা বিশ্বমঞ্চে উজ্জ্বল করা। আমি বিশ্বাস করি, এবার মুকুটটা আমরা ঘরে নিতে পারব।’

আগামীকাল শুক্রবার (২১ নভেম্বর) থাইল্যান্ডের পাক ক্রেটে অনুষ্ঠিত হবে ‘মিস ইউনিভার্স ২০২৫’-এর গ্র্যান্ড ফিনালে। এর আগেও বাংলাদেশ থেকে দুজন–শিরিন শিলা (২০১৯) এবং আনিকা আলম (২০২৪) এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিলেও কেউ উল্লেখযোগ্য স্থানে উঠতে পারেননি। তবে এবার চিত্র বদলে গেছে। প্রাপ্ত ভোট, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিপুল জনপ্রিয়তা এবং শোবিজ অঙ্গনের সর্বস্তরের সমর্থন– সব মিলিয়ে বাংলাদেশের মিস ইউনিভার্স যাত্রা নতুন মাত্রা পেয়েছে। দেশের দর্শকদের প্রত্যাশা এখন একটাই– মিথিলা যেন এবার দেশের জন্য নিয়ে আসতে পারেন একটি বড় অর্জন।

সূত্র: সমকাল

Tags :

Entertainment Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025