বিশ্বব্যাপী বাড়ছে করোনার সংক্রমণ

করোনাভাইরাসকে বিশ্বব্যাপী মহামারি ঘোষণার পাঁচ বছরের বেশি সময় পরও এর নতুন নতুন ভেরিয়েন্টের আবির্ভাব অব্যাহত রয়েছে। মাঝে কিছুদিন ভাইরাসটিতে আক্রান্তের হার নিম্নপর্যায়ে থাকলেও সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, এই হার উর্ধ্বগামী।

এরইমধ্যে ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া। আক্রান্তরা অধিকাংশ কেরালার। তার পরেই রয়েছে গুজরাট, পশ্চিমবঙ্গ ও দিল্লি। আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সরকার। সব অক্সিজেন, আইসোলেশন বেড, ভেন্টিলেটর ও প্রয়োজনীয় ওষুধের যোগান নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, এই মুহূর্তে ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ৩৬৮। একদিনে আরও চার জনের মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে। ভারত সরকার জানিয়েছে, বেশিরভাগ আক্রান্ত গুরুতর সমস্যা নেই ৷ তারা বেশিরভাগই বাড়িতে চিকিৎসাধীন।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ভারতে এখন পর্যন্ত ৫৫ জনের করোনায় মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সম্প্রতি ভারতের স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক ডাক্তার সুনীতা শর্মার সভাপতিত্বে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সেল, জরুরি ব্যবস্থাপনা প্রতিক্রিয়া (ইএমআর) সেল, জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (এনসিডিসি), ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর), ইন্টিগ্রেটেড ডিজিজ সার্ভিল্যান্স প্রোগ্রাম (আইডিএসপি) এবং দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকারি হাসপাতালগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

চলতি বছর করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির খবর পাওয়া বেশ কয়েকটি দেশের মধ্যে ভারতই সবশেষ। পাঁচ বছরের বেশি সময় পরও ভাইরাসটির নতুন নতুন ভেরিয়েন্টের আবির্ভাব অব্যাহত রয়েছে। ভারতে এক সপ্তাহে করোনা রোগী বেড়েছে ১২০০ শতাংশের বেশি। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর) জানিয়েছে, পশ্চিম ও দক্ষিণে করোনা রোগীদের নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে দেখা গেছে। নতুন রূপগুলো ওমিক্রনের সাবভেরিয়েন্ট।

আইসিএমআর প্রধান ড. রাজীব বেহেল বলেছেন, এই সাবভেরিয়েন্টগুলোই সংক্রমণ বৃদ্ধির মূল কারণ। কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রথমে দক্ষিণ ভারতে, পরে পশ্চিম ভারত এবং এখন উত্তর ভারতেও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই সব আক্রান্ত সমন্বিত রোগ নজরদারি কর্মসূচির (আইডিএসপি) মাধ্যমে নজর রাখা হচ্ছে।

২০২০ সালে শুরু হওয়া এই মহামারিতে এখন পর্যন্ত ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৪ কোটি। মৃত্যু হয়েছে প্রায় সাড় ৫ লাখ মানুষের। বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিনেশন প্রকল্পের আওতায় ভারতের ৭২ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করেছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

এদিকে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের হার আবারও ঊর্ধ্বমুখী। এই পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় মাস্ক ব্যবহারে সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। বিশেষ করে বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিদের ভিড়যুক্ত স্থান এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে করোনাভাইরাসের প্রধান রূপটি, যা এই রোগের নতুন বিস্তার ঘটাচ্ছে, সেটি এনবি.১.৮.১ নামে পরিচিত। এর কারণে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড, চীন ও হংকংসহ অন্যান্য দেশে আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। বিশেষ করে এই এনবি.১.৮.১ এখন চীন ও হংকংয়ে উদ্বেগের মূল কারণ। তবে ভারতে কিছু ক্ষেত্রে এলএফ.৭ নামে দ্বিতীয় আরেকটি ভ্যারিয়েন্টও দায়ী।

অন্যদিকে, ইংল্যান্ডে এনবি.১.৮.১ ভ্যারিয়েন্টে ১৩ জন আক্রান্তের কথা জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সংস্থা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, এপ্রিলের শেষ দিকে বিশ্বব্যাপী জমা দেওয়া সিকোয়েন্সের প্রায় ১০.৭ শতাংশ ছিল এনবি.১.৮.১। যদিও, তার এক মাস আগে এটি ছিল মাত্র ২.৫ শতাংশ।

বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টটি আগের যেকোনো ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে বেশি মারাত্মক বা প্রাণঘাতী- এমন কোনো প্রমাণ মেলেনি। তবে, এটি আরও সহজে ছড়িয়ে পড়ে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Tags :

International News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

 People’s Agenda

Quick Links

Copyrights are reserved by NE News © 2025, Jun 15