আর্জেন্টিনার মাটিতে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে হয়তো শেষ ম্যাচটা খেলে ফেললেন লিওনেল মেসি। বিশেষ এই রাতে পুরো পরিবারকে নিয়েই আর্জেন্টিনার এস্তাদিও মনুমেন্তালে হাজির হয়েছেন তিনি। স্ত্রী আন্তোনেলা, তিন ছেলে, বাবা-মা সবাই ছিলেন গ্যালারিতে।
২০ বছর আগে এই একই স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের জার্সি গায়ে অভিষেক হয়েছিল মেসির। দিনটা ছিল ২০০৫ সালের ৯ অক্টোবর। প্রায় দুই দশক পর এই একই মাঠে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের বিদায়ের শুরুটা করলেন মেসি। তাই ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে আবেগঘন ম্যাচকে স্মরণীয় করে রাখতে জ্বলে উঠলেন নিজেই। মেসির জোড়া গোলেই ভেনেজুয়েলাকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে আর্জেন্টিনা। দলের হয়ে অন্য গোলটি করেন লাউতারো মার্টিনেজ।
এই জোড়া গোলের মাধ্যমে চলতি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন মেসি। একই সঙ্গে বিশ্বকাপ বাছাই ইতিহাসে তার গোলসংখ্যা দাঁড়াল ৩৫-এ। জাতীয় দলের হয়ে এটি ছিল তার ১১৩তম গোল, যার মধ্যে ১০০টিই এসেছে বাম পায়ের যাদুকরী স্পর্শে। লিওনেল স্কালোনির অধীনে এটি তার ৪৮তম গোল, যা তাকে আর্জেন্টিনার সর্বকালের সেরা শীর্ষ গোলদাতা হিসেবে আরও সুপ্রতিষ্ঠিত করল।
ম্যাচ শুরুর আগেই মনুমেন্তালে ছিল উৎসবের আবহ। ৮০ হাজার দর্শক উঠে দাঁড়িয়ে করতালিতে অভিবাদন জানান প্রিয় নায়ককে। খেলার আগে তিন সন্তানকে নিয়ে মাঠে প্রবেশ করেন মেসি। সেই মুহূর্তের আবেগ চোখ ভিজিয়েছে তারও। ম্যাচের শুরুতে কিছুটা নিষ্প্রভ ছিলেন মেসি। তবে সময় যত গড়িয়েছে, মেসি ততটাই স্বরূপে ফিরেছেন।
৩৯ মিনিটে লিয়ান্দ্রো পারেদেসের পাস ধরে জুলিয়ান আলভারেজ বল বাড়ান মেসির দিকে। মনুমেন্তালে হাজির ৮০ হাজারের মতো দর্শককে উল্লাসে মাতান এলএমটেন। ঠাণ্ডা মাথায় চিপ শটে জাল খুঁজে নেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি। দ্বিতীয়ার্ধে নিকো গঞ্জালেসের ক্রসে লাউতারো মার্টিনেজ হেডে গোল করলে ব্যবধান দ্বিগুণ হয়। এরপর থিয়াগো আলমাদার সঙ্গে দারুণ বোঝাপড়ায় সহজ ট্যাপ-ইনে জোড়া গোল পূর্ণ করেন মেসি।
২০ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে বিশ্বকাপ, কোপা আমেরিকা, ফিনালিসিমার শিরোপা জেতা মেসি এবার দেশের মাটিতে শেষ বিশ্বকাপ বাছাই ম্যাচকেও রূপ দিলেন অবিস্মরণীয় স্মৃতিতে। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ইকুয়েডরের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচ দিয়ে শেষ হবে আর্জেন্টিনার বাছাই মিশন। তবে মনুমেন্তালের এই রাতটি মেসির ভক্তদের মনে থাকবে চিরকাল।
ব্রাজিলের সহজ জয়
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে দাপুটে জয় তুলে নিয়েছে ব্রাজিল। মারাকানা স্টেডিয়ামে ঘরের মাঠে চিলিকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে কার্লো আনচেলত্তির দল। এ জয়ে কনমেবল অঞ্চলের পয়েন্ট টেবিলের দুই নম্বরে উঠেছে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। যদিও বিশ্বকাপের টিকিট আগেই নিশ্চিত করেছে সেলেসাওরা।
নেইমার ও ভিনিসিউস জুনিয়রকে ছাড়াই দুর্দান্ত খেলেছে তরুণ ব্রাজিল। পুরো ম্যাচে ৬৫ শতাংশ বল দখলে রেখে আনচেলত্তির শিষ্যরা নিয়েছে ২২টি শট, যেখানে চিলি সুযোগ তৈরি করতে পেরেছে মাত্র তিনবার।
৩৮ মিনিটে ব্রাজিলের জার্সিতে প্রথম গোল করেন তরুণ এস্তেভাও উইলিয়ান। বিরতির পর আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে সেলেসাওরা। ৭২ মিনিটে বদলি হিসেবে মাঠে নেমে এক মিনিটের মধ্যেই গোল করেন লুকাস পাকুয়েতা। এরপর ৭৬ মিনিটে ব্রুনো গিমারেসের গোল চিলির কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেয়।
ইউরোপের বড় ক্লাবে খেলা তরুণদের পারফরম্যান্সে খুশি কোচ আনচেলত্তি। অভিজ্ঞ তারকাদের অনুপস্থিতিতেও তারা দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে জয়ে ভরিয়ে দিয়েছে মারাকানার গ্যালারি।
আগামী ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের শেষ ম্যাচে মাঠে নামবে ব্রাজিল।