ভারতে আশ্রয়ে ছাড় পাবেন বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা

কোনো সংখ্যালঘু যদি ‘ধর্মীয় নিপীড়ন’ এর শিকার হয়ে অথবা ‘ধর্মীয় নিপীড়ন’ এর আশঙ্কায় ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ভারতে আশ্রয় নিয়ে থাকেন, তাদের ক্ষেত্রে নতুন চালু হওয়া একটি আইনে ছাড় দেবে ভারত। এই ছাড় পাবেন বাংলাদেশ, পাকিস্তান আর আফগানিস্তানের নিপীড়িত সংখ্যালঘুরা।

এর আগে, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী তিনটি প্রতিবেশী দেশের যেসব সংখ্যালঘু ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হওয়ার দাবি করে বা অভিযোগ তুলে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাদের ক্ষেত্রে আশ্রয় নেওয়ার সময়সীমা ছিল ২০১৪ সালের ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত। সেই সময়সীমা ১০ বছর বাড়ানো হয়েছে নতুন আইনে।

‘অভিবাসন ও বিদেশি আইন, ২০২৫’ পয়লা সেপ্টেম্বর থেকে বলবৎ করেছে ভারত। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একগুচ্ছ গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে বিধিমালা জারি করে ওই দিন থেকেই আইনটি চালু করে দেওয়া হয়েছে, যদিও দেশের সংসদে এপ্রিল মাসেই তা পাশ হয়ে গিয়েছিল।

নতুন আইনে প্রতিবেশী দেশগুলোর ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে যারা ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তারা বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা না থাকলেও ভারতে আশ্রয় নিতে পারবেন বলে বিধান রয়েছে, তেমনই ‘অবৈধ অভিবাসীদের’ আটক ও প্রত্যর্পণের পদ্ধতি এবং সারা দেশ জুড়েই বিদেশি ট্রাইব্যুনাল গঠনের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

এখন শুধু আসাম রাজ্যে বিদেশি ট্রাইব্যুনাল ব্যবস্থা রয়েছে। এই ট্রাইব্যুনালগুলোর কার্যপদ্ধতি কী হবে, তাদের ক্ষমতাসহ নানা বিষয় বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে ‘অভিবাসন ও বিদেশি আইন ২০২৫’ এর জারি হওয়া বিধিমালাগুলোয়।

‘অবৈধ অভিবাসী’ থাকছে বা লুকিয়ে আছে সন্দেহে যে কোনও জায়গায় যেসব পরিদর্শন চালানোর সুযোগ রাখা হয়েছে, আবার প্রত্যর্পণের আগে আটক হওয়া অবৈধ অভিবাসীদের পেছনে খরচ করা অর্থ তার কাছ থেকেই আদায় করারও পথ করে দেওয়া হয়েছে।

‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে আটকদের আদালতে হাজির করানোর বিষয়ে এই আইনে কোথাও উল্লেখ না থাকার বিষয়টিকে ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’ বলে সমালোচনাও শুরু হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন যে এত গুরুত্বপূর্ণ একটি আইন কার্যত বিনা প্রচারে, বিনা বিতর্কেই পাশ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরকম একটি আইন পাশ করিয়ে কি প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে সেদেশের সংখ্যালঘুদের ভারতে চলে আসতে উৎসাহিত করা হচ্ছে কি না সেই প্রশ্নও তুলছেন তারা।

প্রতিবেশী দেশে ‘ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার’ নাগরিকদের কী কী ছাড়?

ভারত সরকারের গেজেটে প্রকাশিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা বিধিমালার মধ্যে একটি হচ্ছে ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ফরেনার্স (এক্সেম্পশান) অর্ডার, ২০২৫’।

ওই নির্দেশে বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে যে কোন কোন শ্রেণির মানুষের জন্য ভারতে প্রবেশ করতে গেলে বৈধ পাসপোর্ট বা বৈধ ভিসা লাগবে না। সেটিরই ‘ই’ অনুচ্ছেদে লেখা হয়েছে– “আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কোনও ব্যক্তি, অর্থাৎ হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি এবং খ্রিস্টান, যারা ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়েছেন অথবা ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হওয়ার আশঙ্কা করে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন এবং ৩১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ সালে অথবা তার আগে এসে থাকেন, (১) পাসপোর্ট বা অন্য ভ্রমণ সংক্রান্ত নথি-সহ যে কোনও বৈধ নথি ছাড়া, অথবা (২) পাসপোর্ট বা অন্য ভ্রমণ সংক্রান্ত বৈধ নথি আছে এবং সেগুলির বৈধতা শেষ হয়ে গেছে,” এ ধরনের মানুষদের ভারতে প্রবেশের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে নতুন আইনটিতে।

অর্থনীতিবিদ ও নাগরিকত্ব আইনের অ্যাক্টিভিস্ট প্রসেনজিৎ বসু বলেন, “ভারতে ২০১৯ সালে যে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাশ হয়েছিল, তাতে প্রতিবেশী তিন দেশের সংখ্যালঘুদের বিষয়ে বলা হয়েছিল যারা নিজেদের দেশে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন, তারা ভারতের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার যোগ্য। এখন চালু হওয়া আইনে বলা হচ্ছে ৩১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ পর্যন্ত যারা ভারতে আশ্রয় নেবেন, তাদের অবৈধ বিদেশি বলে আটকও করা হবে না।”

তিনি বলেন, “সিএএ যে ধাঁচে করা হয়েছিল, নতুন আইনের স্ট্রাকচারটাও একেবারে এক। এরকম একটা আইনের অর্থ কি এটাই যে বাংলাদেশ থেকে সেদেশের হিন্দুদের ভারতে চলে আসতে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে? অথচ কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দলই তো বলে আসছে যে ভারত নাকি অবৈধ বাংলাদেশিতে ভরে গেছে।”

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনটি ২০১৯ সালে বহু বিতর্ক ও গণবিক্ষোভের মধ্যে সংসদে পাশ হয়ে গেলেও তার বিধিমালা জারি করে সেটি বলবৎ করা হয়েছে মাত্রই গত বছর – ২০২৪ সালে।

বাংলাদেশ, পাকিস্তান আর আফগানিস্তান – এই তিন প্রতিবেশী দেশ ছাড়াও শ্রীলঙ্কার তামিল অভিবাসী, যারা ২০১৫ সালের নয়ই জানুয়ারি পর্যন্ত ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন এবং যারা নিজেদের নাম নথিভুক্ত করেছেন, তাদের ক্ষেত্রেও ভারতে প্রবেশ বা প্রস্থানের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া রয়েছে।

অবৈধ অভিবাসীদের আটক ও প্রত্যর্পণ

ভারতের নতুন আইনে বিস্তারিতভাবে লেখা হয়েছে যে অবৈধ অভিবাসীদের কীভাবে চিহ্নিত করতে হবে, তাদের কোথায় আটক রাখা হবে, পরিচয় কীভাবে নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রত্যর্পণই বা কোন পদ্ধতিতে হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা বিধিমালায় লেখা হয়েছে যে কোনও অবৈধ অভিবাসী ভারতে প্রবেশ করতে চাইলে সীমান্তরক্ষী বাহিনীগুলো এবং উপকূল-রক্ষী বাহিনী তাদের বাধা দেবে এবং ফেরত পাঠিয়ে দেবে।

তবে ফেরত পাঠানোর আগে তাদের বায়োমেট্রিক তথ্য, অর্থাৎ আঙ্গুলের ছাপ এবং চোখের মণির ছবি তুলে রাখতে হবে। সেই তথ্য কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট পোর্টালে আপলোড করারও কথা বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে ভারতের কিছু সীমান্তে বায়োমেট্রিক তথ্য ধারণ করে রাখার এই পদ্ধতি চালু রয়েছে।

সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নানা সূত্র জানিয়েছে যে কোনও একজন ব্যক্তি যদি অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করতে গিয়ে বাধা পান এবং তিনি যাতে পরে আবারও একই প্রচেষ্টা চালিয়ে সফল হন, সেক্ষেত্রে ভারতের বিভিন্ন জাতীয় পরিচয়পত্র জোগাড় করতে গেলেই তিনি ধরা পড়ে যাবেন যে আগে কখনো একবার তিনি অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন।

অবৈধ অভিবাসীদের চিহ্নিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্র-শাসিত অঞ্চলের অসামরিক প্রশাসনের ওপরে। যে পদ্ধতিতে অবৈধ অভিবাসী চিহ্নিত করতে হবে প্রশাসনকে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, “সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি কোনও কারণে বিশ্বাস করে যে কোনও জায়গায় বা কোনও পরিসরে একজন অবৈধ অভিবাসী থাকছেন বা লুকিয়ে আছেন, সেখানে পরিদর্শন চালাতে পারবে।”

যদি কোনও অবৈধ অভিবাসীকে আটক করা হয়, একটি ‘হোল্ডিং সেন্টার’ বা ‘ক্যাম্পে’ রেখে তার চলাফেরার ওপরে বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে বলে নতুন আইনে লেখা হয়েছে। তবে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে যাদের আটক করা হবে তাদের আদালতে হাজির করানোর বিষয়ে নতুন বলবৎ হওয়া আইনের এই অংশটিতে কোথাও উল্লেখ নেই।

প্রসেনজিত বসু বলেন, “ভারতের আইন অনুযায়ী পুলিশ কাউকে আটক করলে তাকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করানো বাধ্যতামূলক, কিন্তু এই আইনে আদালতের কোনও প্রসঙ্গই রাখা হয়নি। আবার কাউকে বিদেশি বলে সন্দেহ হলে এই আইন অনুযায়ী থানার হেড কনস্টেবল পদমর্যাদার কর্মকর্তাও আটক করতে পারবেন।”

আইন বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার কর্মীরা বারে বারেই বলে এসেছেন যে সংবিধান অনুযায়ী ভারতের নাগরিক যা অধিকার ভোগ করেন ভারতে যদি কোনও বিদেশি নাগরিক অবৈধভাবেও বসবাস করে ধরা পড়েন, তিনিও সেই সব অধিকারই ভোগ করার যোগ্য।

অর্থনীতিবিদ প্রসেনজিৎ বসুর কথায়, “এই আইন তো মানবাধিকার লঙ্ঘন!” তিনি এটিকে ‘ড্রাকোনিয়ান ল’ (কঠোর আইন) বলেও উল্লেখ করেন।

এই পদ্ধতিতেই চলছে ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ চিহ্নিতকরণ

ঘটনাচক্রে গত কয়েক মাসে অবৈধ বাংলাদেশি চিহ্নিতকরণ ও আটকের যেসব বিশেষ অভিযান চলছে ভারতের নানা রাজ্যে, সেই সব ক্ষেত্রে ঠিক এই পদ্ধতিই মেনে চলা হচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী একাধিকবার অভিযোগ তুলেছেন, যে পদ্ধতিতে অবৈধ অভিবাসী আটকের নামে ভারতীয় বাংলাভাষীদের আটক করা হচ্ছে নানা রাজ্যে, তার ভিত্তি হচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ‘গোপন নির্দেশ’। সেই ‘গোপন নির্দেশ’ বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্যে পাঠানো হয়েছিল বলেও মমতা ব্যানার্জী বারবার অভিযোগ করে এসেছেন।

আটক হওয়া ব্যক্তির কাছে বৈধ পাসপোর্ট বা অন্য নথি থাকলে তাকে অবিলম্বে প্রত্যর্পণ করতে হবে। যদি বৈধ পাসপোর্ট বা অন্য নথি না থাকে তাহলে ওই ব্যক্তির নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে হবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশটির দূতাবাসের কাছ থেকে। এরপরে তাকে প্রত্যর্পণ করতে হবে। ডেপুটি পুলিশ সুপার স্তর বা তার থেকে উচ্চতর পদে আসীন কোনও অফিসার অবৈধ অভিবাসী চিহ্নিতকরণ ও প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়াটি দেখভাল করবেন। ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা, ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর অফিসাররাই এখন ব্যুরো অফ ইমিগ্রেশনে কাজ করেন। ওই ব্যুরোকে অবৈধ অভিবাসী চিহ্নিতকরণ, আটক করা ও প্রত্যর্পণের সম্পূর্ণ তথ্য রাখতে হবে।

প্রত্যর্পণ এবং তার আগে আগে আটক হওয়া অবৈধ অভিবাসীদের জন্য যা খরচ হবে, সেসব খরচ, যদি কেন্দ্রীয় সরকার মনে করে, তা ওই অবৈধ অভিবাসীর কাছ থেকে আদায় করতে পারবে। এজন্য ভারতে যদি ওই বিদেশি নাগরিকের কোনও সম্পত্তি থেকে থাকে, তাও বাজেয়াপ্ত করতে পারবে।

ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল

অভিবাসন ও বিদেশি আইন ২০২৫ অনুযায়ী কোনও ব্যক্তি বিদেশি কি না, তা নির্ধারণের জন্য ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল বা বিদেশি ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান রাখা হয়েছে।

এখন পর্যন্ত শুধু আসাম রাজ্যে এ ধরণের বিদেশি ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। তবে নতুন আইনে বিদেশি ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিষয়টি কোনও একটি রাজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়নি।

নতুন আইনটির বিধিমালায় কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা গঠিত বিদেশি ট্রাইব্যুনালের উল্লেখ রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার যাদের মনে করবে, এমন সর্বোচ্চ তিনজন আইনজ্ঞকে ট্রাইব্যুনালে নিযুক্ত করা যাবে।

কোনও ব্যক্তির নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলে, অর্থাৎ সন্দেহজনক বিদেশি হলে তাকে প্রথমে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেবে বিদেশি ট্রাইব্যুনাল। যে নোটিশ পাঠাতে হবে, সেটি ইংরেজিতে এবং সংশ্লিষ্ট রাজ্যটির সরকারি ভাষায় লিখতে হবে।

এটাও ওই নোটিশে লেখা থাকতে হবে যে সন্দেহজনক ব্যক্তিরই দায় এটা প্রমাণ করার যে তিনি বিদেশি নন। যদি ওই ব্যক্তি এমন কোনও প্রমাণ হাজির না করতে পারেন যে তিনি বিদেশি নন বা তিনি যদি জামিনের ব্যবস্থাও না করতে পারেন, তাহলে সেই ব্যক্তিকে আটক করে ‘হোল্ডিং সেন্টার’এ রাখা হবে।

এই আইনে বিদেশি ট্রাইব্যুনালগুলোকে কয়েকটি ক্ষেত্রে দেওয়ানি আদালতের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে অভিবাসন ও বিদেশি আইন, ২০২৫ অনুযায়ী।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

Tags :

International News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025