বাংলাদেশে পাঁচ বছর আগে ভয়াবহ রূপ নেওয়া মহামারি করোনা ভাইরাস ফের নতুন রূপে ফিরে এসেছে। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বাংলাদেশে বাড়তি সতর্কতা জোরদার করা হয়েছে। একইসাথে দেশে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপও বাড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১৩৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে সাতজন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ শতাংশ।
প্রায় দেড় বছর পর গত ৫ জুন দেশে করোনায় আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি করে। এর মধ্যে শুক্রবার আরও দুজন রোগী মারা গেছেন। ২০২০ সালের মার্চ থেকে এ পর্যন্ত দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৮০৭ জনে। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ২৯ হাজার ৫০২ জন।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি বিমানবন্দরে বাড়তি সতর্কতা, মেট্রোরেল ভ্রমণে মাস্ক ব্যবহার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঁচ দফা নির্দেশনা পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, আন্তর্জাতিক আগমনী ইমিগ্রেশনের প্রবেশ পথে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সরঞ্জাম বসানো হয়েছে। থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয় করা হচ্ছে। এ ছাড়াও টার্মিনালের স্পর্শকাতর পয়েন্টগুলোতে সবার জন্য মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
অন্যদিকে সরকারের তথ্য বলছে, শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১৬৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে রাজধানীর সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে ১৫ জন, রাজধানীর বেসরকারি হাসপাতালে ২০ জন, ঢাকা বিভাগে ৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৮ জন এবং বরিশাল বিভাগে ১০১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
গত বছরের ১২ জুন পর্যন্ত দেশে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল তিন হাজার ১৫০ জন এবং মারা গিয়েছিল ৩৯ জন। গত বছরের তুলনায় চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবার থেমে থেমে বৃষ্টির সঙ্গে ভ্যাপসা গরম ডেঙ্গু বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট সহায়ক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এ ছাড়াও ডেঙ্গু রোধে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর তৎপরতার অভাব এবং সর্বোপরি সরকারের প্রস্তুতির অভাবকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বর্তমানে দেশে করোনা, ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া, ভাইরাসজনিত জ্বর, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত জ্বর, টাইফয়েডের কারণে জ্বর ইত্যাদি চলমান আছে। ফলে বয়স্ক মানুষ, দীর্ঘমেয়াদী জটিল রোগে আক্রান্ত মানুষ, শিশু, গর্ভবতী নারী এবং নানা কারণে যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি কম তারাই বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তাই এই সময়ে কারও জ্বর হলে কোনোভাবেই সেটাকে অবহেলা করা যাবে না। একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক চিকিৎসা নিতে হবে।
এ বিষয়ে হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, করোনা আবার বাড়তে শুরু করেছে। ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া, ভাইরাসজনিত জ্বর, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত জ্বর, পানিবাহিত সংক্রমণজনিত জ্বর (যেমন টাইফয়েড) ইত্যাদি চলমান রয়েছে। এগুলোর সঙ্গে করোনা যুক্ত হওয়াতে ভোগান্তি ও প্রাণহানির সম্ভবনা বেড়ে গেল।
তিনি আরও বলেন, জ্বর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য জ্বরের ধরনটি শনাক্ত হওয়া জরুরি। স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব করোনাসহ সব ধরনের জ্বরকে নিবিড় নজরদারিতে রাখা এবং জনসাধারণকে সময়ে সময়ে গাইড করা।
বর্তমান সময়ে জ্বর হলে করণীয় কী এ বিষয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, এই সময়ে কারও জ্বর হলে এবং জ্বর যদি সহনীয় পর্যায়ে থাকে তাহলে তিনদিন বিশ্রামে থাকতে হবে। যদি জ্বর ঠিক হয়ে যায় তাহলে ভালো, আর যদি জ্বর না কমে বাড়তেই থাকে তখন চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। চিকিৎসক লক্ষণ বুঝে বা পরীক্ষা করে পরামর্শ দেবেন।
তিনি আরও বলেন, ভাইরাল জ্বর তিন দিন পর কমতে থাকে। কারও যদি প্রচণ্ড জ্বর থাকে তাহলে তিন দিন অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। দ্রুত তিনি যেন কোনো চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নেন।