বাড়ছে জ্বালানির দাম, হুমকিতে অর্থনীতি

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাতের জেরে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম লাফিয়ে বাড়ছে। নানা সংকটে চাপে থাকা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য এটি নতুন একটি হুমকি তৈরি করেছে। এটি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্যও দুশ্চিন্তার কারণ।

শনিবার আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক সংবাদে জানিয়েছে, এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে তেলের বাজারে। ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ১০ জুন থেকে ১৮ শতাংশ বেড়ে বৃহস্পতিবার ৭৯.০৪ ডলারে পৌঁছায়, যা প্রায় পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের দাম বেড়েছে আরও বেশি। ২১ শতাংশ বেড়ে এর দাম দাঁড়িয়েছে ৭৫ ডলারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তেলের উচ্চমূল্য শেয়ারবাজারেও প্রভাব ফেলতে পারে। সিটিগ্রুপ বিশ্লেষকরা বলেন, এখন শেয়ারবাজারের জন্য মূল বিষয় হয়ে দাঁড়াবে জ্বালানি পণ্যের মূল্য।

কত পর্যন্ত বাড়তে পারে দাম?

বিশ্লেষকরা সরবরাহ নিয়েও চিন্তিত। কারণ ইরান জ্বালানি তেল পরিবহনে ব্যবহৃত পারস্য উপসাগর ও ওমান উপসাগরকে সংযুক্ত করা হরমুজ প্রণালি বন্ধের হুমকি দিয়েছে, যে প্রণালি দিয়ে প্রতিদিন ১৮ থেকে ১৯ মিলিয়ন ব্যারেল তেল পরিবাহিত হয়, যা বৈশ্বিক তেলের ২০ শতাংশ।

গত ১৫ জুন ইরানি এমপি ও ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী আইআরজিসি জেনারেল এসমাইল কোসারি বলেন, তারা হরমুজ প্রণালি বন্ধের বিষয়টি ‘গুরুত্বসহকারে’ বিবেচনা করছেন।

ইরান তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংস্থা-ওপেক সদস্যদের মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী। দিনে প্রায় ৩.৩ মিলিয়ন ব্যারেল উৎপাদন করে দেশটি।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি বৃহৎ বহুজাতিক বিনিয়োগ ও আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সিটিগ্রুপ ইনকরপোরেটেড বলছে, যদি সংঘাতের কারণে দৈনিক উৎপাদন ৩ মিলিয়ন ব্যারেল কম হলে দাম ৭৫ ডলার থেকে বেড়ে ৯০ ডলার পর্যন্ত যেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ও প্রভাবশালী বিনিয়োগ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান জেপি মরগান বলছে, যদি হরমুজ প্রণালি বন্ধ হয়, তাহলে দাম ১২০ থেকে ১৩০ ডলার পর্যন্ত উঠতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক এবং আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান শ্যাকস বলছে, সংঘাতে ১.৭৫ মিলিয়ন ব্যারেল উৎপাদন কমে গেলে এবং ওপেক+অর্ধেক ঘাটতি পূরণ করলে, ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম শীর্ষে পৌঁছাতে পারে ৯০ ডলারে। আর হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

তবে ২০২৬ সালের মধ্যে ইরানের সরবরাহ পুনরুদ্ধার হলে দাম আবার ৬০ ডলারে নেমে আসবে বলে পূর্বানুমাণ করছে গোল্ডম্যান শ্যাকস।

বাংলাদেশে কী হবে

তেলের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি বাংলাদেশের ভোক্তার জন্য চিন্তার যথেষ্ট কারণ আছে। কারণ, তেলের মূল্য নির্ধারণ এখন স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে হয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের শর্ত মেনে এই পরিবর্তনের পর থেকে প্রতি মাসেই তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করা হচ্ছে।

জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেছেন, যদি তেলের দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকে, তাহলে আমাদের জন্য সমস্যা হবে।

বিপিসি চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্য অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করি। মাসের গড় মূল্য বিবেচনায় নিয়ে আমরা প্রতি মাসে মূল্য সমন্বয় করি। পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।

Tags :

International News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

 People’s Agenda

Quick Links

Copyrights are reserved by NE News © 2025