‘সর্বকালের সেরা ফুটবলার হতে চাই’—এই কথাটা যখন বলেছিলেন রুনি বার্দগি, তখন তিনি ছিলেন কেবল একজন ১৭ বছর বয়সী উদীয়মান উইঙ্গার। আজ সেই রুনি স্বপ্ন ছুঁয়েছেন। ডেনিশ ক্লাব কোপেনহেগেন থেকে বার্সেলোনায় চার বছরের চুক্তিতে যোগ দিয়েছেন এই সুইডিশ ফুটবলার।
ফুটবল ম্যানেজার গেমের ভক্তরা তার নাম আগেই জেনে ফেলেছিলেন— এক ‘ওয়ান্ডার কিড’ হিসেবে। বাস্তব ফুটবলেও নিজের জাত চিনিয়েছেন ২০২৩ সালের চ্যাম্পিয়নস লিগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক গোল করে।
কে এই রুনি?
আসল নাম রুনি বার্দগি। ডাকনামে ডাকা হয় শুধু ‘রুনি’ নামে। কুয়েত সিটিতে জন্ম নেয়া ফুটবলারের বাবা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ভক্ত হলেও ছোটবেলায় রুনিকে দেখা যায় বার্সেলোনার জার্সি পরে জাবুলানি বলের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে।
তার নামের সঙ্গে ওয়েন রুনির কোনো সম্পর্ক নেই— ২০২৪ সালে মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য অ্যাথলেটিক-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘এটা শুধু মায়ের দেওয়া একটা সৌভাগ্যের প্রতীকী নাম।’
২০১২ সালে মা ও ছোট ভাই রায়ানের সঙ্গে সুইডেনে চলে আসেন রুনি। বাবা থেকে যান কুয়েতেই। কাল্লিঙ্গে বসতি, স্থানীয় দল কাল্লিঙ্গে এসকে, এরপর রোদেবি এআইকে, ২০১৯-এ মালমো এবং ২০২০ সালে যোগ দেন ডেনিশ ক্লাব কোপেনহেগেনে।
১৬ বছরে প্রথম দলে অভিষেক, আর ১৭ বছর বয়সেই চ্যাম্পিয়নস লিগে ইতিহাস গড়া গোল। ৮৪ ম্যাচে ১৫ গোল, যার মধ্যে সবচেয়ে স্মরণীয় সেই ম্যান ইউয়ের বিপক্ষে ৮৭তম মিনিটে দারুণ হাফ-ভলি!
চোট আর প্রত্যাবর্তনের গল্প
২০২৪ সালের এপ্রিলে মারাত্মক হাঁটুর চোট পান রুনি, যা তাকে প্রায় এক বছরের জন্য মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেয়। মাঠে ফিরে মে মাসে ফের আরেক চোটে আবার ছিটকে পড়েন।
এতদিনে সুইডেন অনূর্ধ্ব-২১ দলে ৯টি ম্যাচ খেললেও জাতীয় দলের হয়ে এখনো অভিষেক হয়নি। ২০২৩ সালে জাতীয় কোচ জানে আন্দারসন বলেছিলেন, ‘ওর এখনো অনেক কিছু প্রমাণ করতে হবে।’ জবাবে রুনি বলেছিলেন, ‘১৭ বছর বয়সে আরও কত কী করলে সুযোগ মেলে?’
বার্সেলোনায় কেন রুনি?
এই চুক্তির পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছেন বার্সার স্পোর্টিং ডিরেক্টর ডেকো। আর্দা গুলার, লুকাস বার্গভালের মতো তরুণ প্রতিভাদের দিকে নজর ছিল বার্সার। তারা অন্য ক্লাবে চলে গেলেও, রুনির ক্ষেত্রে সেই ভুল হতে দেননি ডেকো।
প্রথম দলে নয়, আপাতত বার্সা অ্যাতলেতিকে রাখা হতে পারে তাকে— যা বার্সার ‘বি’ দল। এখানেই তার নিবন্ধন সহজ, আর চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ালিফায়ার বা কোপা দেল রে-র মতো ম্যাচে দেখা যেতে পারে তাকে।
ক্লাব সূত্রে জানা যায়, মাত্র ২ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে চুক্তিটি ‘উইন-উইন’ মনে করছেন তারা। রুনি যদি নিজেকে প্রমাণ করতে পারে, এটি হতে পারে এক বিশাল লাভজনক বিনিয়োগ।
খেলার ধরন কেমন রুনির?
ডান দিক থেকে কেটে ভেতরে ঢুকে প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করতে পারেন তিনি। গোলের পাশাপাশি সতীর্থদের খুঁজে নিয়ে পাস দেয়ার ক্ষমতা আছে তার।
২০২৩ সালে এক প্রিমিয়ার লিগ স্কাউট বলেছিলেন, ‘ওকে প্রথমে ছোট পুকুরের বড় মাছ হতে হবে। হয়তো ৪-৩-৩ ফরমেশনে ডান পাশে খেলাটা তার জন্য উপযুক্ত।’
তবে সমস্যা একটাই— বার্সার ডান পাশটা এখন লামিন ইয়ামালের দখলে, যিনি বয়সে রুনির চেয়েও কম!
রুনির মুখেই তার স্বপ্ন
বার্সেলোনায় যোগ দেওয়া তার কাছে স্বপ্নপূরণ। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলায় কেবল মেসির ক্লিপ দেখতাম ইউটিউবে। কোনো খেলোয়াড় না, কেবল মেসি।’
দ্য অ্যাথলেটিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে নিজের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গোল বলেছিলেন সেই ম্যান ইউনাইটেডের বিপক্ষে গোলটিকে। এবং পাঁচ বছরের মধ্যে বিশ্বের সেরা হতে চান— এ লক্ষ্যেই কাজ করছেন প্রতিদিন।
রুনি বলেছিলেন, ‘স্বপ্ন যদি দেখো, বড়টাই দেখো।’ এখন দেখা যাক, বার্সেলোনার আকাশে তার সেই স্বপ্ন কতটা উঁচুতে উড়ে!