ঠিক এক বছর আগে এই দিনে প্রথম এল ক্ল্যাসিকো খেলতে নেমেছিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। ০-৪ গোলে বিধ্বস্ত হওয়া সেই ম্যাচে উদ্দেশ্যহীনভাবে দৌড়াদৌড়ি করে আটবার অফসাইড হয়েছিলেন তিনি। সেই ম্যাচের পর স্প্যানিশ ‘ডেইল এএস’ তাঁকে বিদ্রূপ করে শিরোনাম করেছিল ‘বিষহীন ও সংকুচিত’। এরপরের তিন এল ক্ল্যাসিকোতেও হারের তেতো স্বাদ পেয়েছিলেন বিশ্বকাপজয়ী এ তারকা। এমবাপ্পের জন্য এমন টানা হারের অভিজ্ঞতা একেবারেই নতুন।
কাতালানদের এই দাপট ভাঙতে মরিয়া তিনি। এই দাপট ভাঙার পথে মূল বাধা এক টিনএজার, লামিনে ইয়ামাল; যিনি আবার গত শুক্রবার একটি ইউটিউব চ্যানেলে রিয়াল মাদ্রিদকে ‘চোর ও অভিযোগকারী’ বলে হাওয়া গরম করে দিয়েছেন। ফুটবলপ্রেমীদের কাছে এল ক্ল্যাসিকো এখন এমবাপ্পে-ইয়ামাল দ্বৈরথও। লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর এই দুই তারকার মুখোমুখি হওয়া এখন ফুটবলের নতুন এক ধ্রুপদি লড়াই হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে। বার্নাব্যুতে আজ বিজয়ীর হাসি হাসবেন কে?
হ্যান্সি ফ্লিকের বার্সার কাছে গত মৌসুমে লা লিগায় দুই ম্যাচেই হেরেছে রিয়াল। সে সঙ্গে কোপা দেল রে ও স্প্যানিশ সুপার কাপ ফাইনালেও হার। এই চার এল ক্ল্যাসিকো জিতে গত মৌসুমে ঘরোয়া ট্রেবল জিতেছে বার্সা। সে সঙ্গে গত বছরের ৪ আগস্ট প্রীতি ম্যাচের হারও রয়েছে। এই পাঁচ হারই কার্লো আনচেলত্তির কোচিংয়ে। চলতি মৌসুমের শুরুতে ইতালিয়ান এ কোচের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন জাবি আলনসো। তাঁর অধীনে দল যে ভালো করছে এর বড় প্রমাণ পয়েন্ট টেবিলে দুই পয়েন্ট ব্যবধানে রিয়ালের শীর্ষে ওঠা। তবে আলনসোর অধীনে বিগ ম্যাচে রিয়াল কেমন যেন নড়েবড়ে হয়ে যায়। ক্লাব বিশ্বকাপের সেমিতে পিএসজির বিপক্ষে হার এবং গত সেপ্টেম্বরে মাদ্রিদ ডার্বিতে অ্যাথলেটিকোর কাছে ৫-২ গোলে বিধ্বস্ত হওয়া এর বড় নজির। সে যাই হোক, আজ বার্সাকে হারাতে পারলে লা লিগায় পাঁচ পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে যাবে রিয়াল। এই চ্যালেঞ্জে রিয়ালের মূল ভরসা কিলিয়ান এমবাপ্পে।
গত মৌসুমে রিয়াল শূন্য হাতে শেষ করলেও এমবাপ্পে কিন্তু সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন। চলতি মৌসুমেও দুর্দান্ত ছন্দে আছেন তিনি। ক্লাব ও জাতীয় দলের পক্ষে টানা ১১ ম্যাচে গোল করেছেন বিশ্বকাপজয়ী এ ফরোয়ার্ড। কেবল জুভেন্তাসের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে গোল পাননি, বেলিংহামের গোলে জিতেছে রিয়াল। ২৬ বছর বয়সী এ স্ট্রাইকার লা লিগায় রিয়ালের ২০ গোলের ১০টিই করেছেন। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে রিয়ালের হয়ে ১৫ গোল করেছেন, যা ক্লাবের মোট গোলের ৫৪ শতাংশ। এ কারণেই কোচ আলনসোর বিশ্বাস এমবাপ্পে এবার বার্সার আধিপত্য ভাঙবেনই, ‘আমরা তাঁর ওপর নির্ভরশীল নই। তবে তাঁর পারফরম্যান্সে আমরা দারুণ খুশি। আমার দৃঢ়বিশ্বাস, সেই ম্যাচের নির্ধারক হবে।’
ইয়ামালও দুর্দান্ত ছন্দে আছেন। গত মৌসুমে বার্সার ট্রেবল জয়ের অন্যতম কারিগর তিনি। যে কারণে ১৮ বছর বয়সী এ তারকা ব্যালন ডি’অর জয়ের অন্যতম ফেভারিট ছিলেন। শেষ পর্যন্ত উসমান দেম্বেলের কাছে হেরে গেলেও বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন ইয়ামাল। সেই ইয়ামাল দুই দিন আগে সামাজিক মাধ্যমে রিয়ালকে ‘চোর ও অভিযোগকারী’ বলায় বেজায় ক্ষেপেছে রিয়াল শিবির। টিনএজার এ তারকার কঠোর সমালোচনা করেছেন তারা। এমনকি তাঁকে ব্যক্তিগত আক্রমণও করছেন।
তবে বার্সার সহকারী কোচ মার্কাস স্রার্গের মতে, এটি নাকি ইয়ামালের জন্য শাপেবর হবে। প্রতিপক্ষ শিবিরের সমালোচনা ইয়ামালকে এল ক্ল্যাসিকোতে ভালো খেলতে অনুপ্রেরণা জোগাবে বলে দৃঢ়বিশ্বাস তাঁর, ‘লামিনে বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার। আমার বিশ্বাস এসব সমালোচনা তাঁকে আরও ভালো খেলতে অনুপ্রাণিত করবে। আমার মনে হচ্ছে, আগামীকাল তাঁকে আমরা সেরা ছন্দে দেখতে পাবো।’
ইয়ামালকে আটকানোর দায়িত্ব থাকবে রিয়ালের লেফট-ব্যাক আলভারো ক্যারেরাসের ওপর। গত মৌসুমে পর্তুগিজ এ ডিফেন্ডার বেনফিকায় থাকার সময় তিন বার ইয়ামালের মুখোমুখি হয়েছিলেন। ওই তিন ম্যাচেই ক্যারেরাসকে নাকানিচুবানি খাইয়ে ছিলেন ইয়ামাল। এবারও এমন কিছু করে বার্সাকে জেতাবেন বলে মনে করছেন সহকারী কোচ।
এল ক্ল্যাসিকো দেখবেন যেভাবে
রিয়াল মাদ্রিদ-বার্সেলোনা মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি বাংলাদেশের কোনো টিভি চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচার করবে না। তবে, বিভিন্ন আনঅফিসিয়াল অ্যাপস, ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ফ্রিতে খেলাটি দেখা যাবে। বিশেষ করে বিগিন অ্যাপ ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে। এ ছাড়া, এইচ ডি স্ট্রিমজ আ্যপেও ম্যাচটি দেখার সুযোগ রয়েছে।




