‘বাঙালি মুসলমান’ ভাষায় আছে বাস্তবে নেই। বাস্তবে আছে ‘মৌলবাদী মুসলমান’ ও ‘সূফী মুসলমান’ (অন্য ধরনের মুসলমানও আছে, যেমন সেক্যুলার মুসলমান, কালচারাল মুসলমান বা এক্স মুসলিম)।
মৌলবাদী মুসলমান কারা?
মৌলবাদীদের সহজে চেনার উপায় এদের ভাষা। বিশেষ করে পরকালের জীবন নিয়ে ভোগবাদী কল্পনা বর্ননায়। যেমন বেহেশতের কল্পনা, যা ভোগ ও যৌনলিপ্সা প্রভাবিত। এরা স্বর্গের বর্ণনাকে (যেমন, ‘হুর’, ‘রাইহান’, ‘নদী’, ‘পানীয়’) ভোগের ভাষা ও কল্পনায় ব্যাখ্যা করে।এই ব্যাখ্যায় বেহেশতের বর্ণনা হয়ে ওঠে ইহজাগতিক ভোগ-বাসনার এক পরকালীন প্রতিস্থাপন। যেমন ৭২ হুরীর কল্পনা (যা কোরআনের কোথাও নির্দিষ্টভাবে নেই), অনন্ত যৌন সুখের প্রতিশ্রুতি, শরাব, সোনা, গহনা, বিলাস, ইত্যাদি শরীরী সুখের সঙ্গে যুক্ত। এটি কিন্তু আসলে ‘ইসলামের’ নামে পুঁজিবাদী সংস্কৃতির আধিপত্য।
মৌলবাদীর ভোগবাদ আবার পিতৃতান্ত্রিক, যা পুরুষতান্ত্রিক শিক্ষার। এদের কল্পনায় নারী একটি পুরস্কার বা ব্যক্তি মালিকানার ভোগ্য বস্তু। এতে নারীকে স্বাধীন আত্মা নয়, বরং পুরুষতান্ত্রিক ভোগের উপকরণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। তাই বলা যায়, এই চিন্তা পিতৃতান্ত্রিক যৌন আধিপত্য ও দেহভিত্তিক ভোগবাদী কল্পনার রূপ।
মৌলবাদী মুসলমানের ‘ধার্মিকতা’ আসলে ধর্মের নামে পুঁজিবাদী ও যৌনবাদী ভোগবাদের চিন্তাচর্চা। এই দৃষ্টিভঙ্গি ইসলামি সূফী আধ্যাত্মিক দর্শনের বিপরীত। এটি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ নিয়ন্ত্রিত ‘রাজনৈতিক ইসলাম’। সহজ আবেগ, রাগ ও যৌন বাসনার মিশ্রণে একটি সাংস্কতিক হাতিয়ার, যা দিয়ে সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ তৈরি ও ব্যবহার করা যায়।
সূফী মুসলমান কারা?
একই ভাবে, সূফীদের বোঝা যায় এদের ভাষা ও আধ্যাত্মিক কল্পনা দিয়ে। সুফিবাদে বেহেশত বা জান্নাত একটি প্রেমময়, নৈতিক ও ঈশ্বর-ঘনিষ্ঠ আত্মিক অবস্থান। এখানে জান্নাত মানে ঈশ্বরের সান্নিধ্য (Qurb), আত্মিক প্রশান্তি (Sakinah), স্বত্তার বিলুপ্তি ও আত্মমুক্তি (Fana, Baqa), দেহ নয়, রূহানিয়াত বা আত্মা-কে কেন্দ্র করে কামনা ও প্রেমের রূপান্তর।

সত্যিকার সূফীরা নারীবাদী। সূফী কবিতায় নারী কেবল ভোগের বস্তু নয়, বরং ঈশ্বরের রূপ, যার মধ্যে প্রেমিক হারিয়ে যেতে চায়। যেমন হাফিজ, রুমি, লালন বা বুল্লে শাহ-এর কাব্যে নারী/পুরুষের শরীরী বা প্রাকৃতিক পার্থক্য গৌণ হয়ে যায়। জান্নাত এখানে দেহ নয়, চেতনাশীল আত্মার প্রশান্তি। সূফীরা ‘হুর’ বা বেহেশতের সৌন্দর্যকেও একধরনের রূপক ভাষা (symbolic language) হিসেবে দেখেন, ঐশ্বরিক গুণের প্রতীক হিসেবে, কোন যৌন বস্তুরূপে নয়।