বাংলাদেশে এখনো ২২.১ শতাংশ জনগোষ্ঠী নিরক্ষর। এ তথ্য জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।
রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ প্রতিবেদনের (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২৪) তথ্য তুলে ধরে বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, দেশে সাত বছর ও তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে বর্তমানে সাক্ষরতার হার ৭৭.৯ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ২২.১ শতাংশ জনগোষ্ঠী এখনো নিরক্ষর। এ জনগোষ্ঠী মূলত বিদ্যালয় বহির্ভূত বা ঝরে পড়া শিশু এবং শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ।
তিনি বলেন, উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের জন্য তাদের সাক্ষরজ্ঞান ও কর্মমুখী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরিত করা অত্যন্ত জরুরি। শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সরকারি দপ্তরের সঙ্গে সঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো এ বিষয়ে কাজ করছে।
উপদেষ্টা বলেন, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন-২০১৪ অনুযায়ী ১০-১৪ বছর বয়সী বিদ্যালয় বহির্ভূত শিশুদের উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া এবং ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী নিরক্ষর নারী-পুরুষকে সাক্ষরতা, জীবিকায়ন দক্ষতা ও জীবনব্যাপী শিক্ষা দেওয়ার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরে সমাপ্তকৃত বিদ্যালয় বহির্ভূত শিশুদের উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচির আওতায় ৬৩ জেলায় ২৫ হাজার ৮১৫টি শিখন কেন্দ্রে ৮ লাখ ২ হাজার ৫৩৬ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল। এর মধ্যে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৪৯৬ জন শিক্ষার্থী মূল ধারায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। অবশিষ্ট শিক্ষার্থীরা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষালাভ করেছে। ২০২২ সালে সমাপ্ত মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্পের মাধ্যমে ৬৪ জেলার ২৪৮টি উপজেলায় ৪৪.৬০ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠী সাক্ষরজ্ঞান লাভ করেছে।
তিনি জানান, কক্সবাজার জেলায় বিদ্যালয় বহির্ভূত কিশোর-কিশোরীদের জন্য দক্ষতাভিত্তিক সাক্ষরতা শীর্ষক পাইলট প্রকল্প গত জুনে শেষ হয়েছে। যেখানে ১৩টি অকুপেশনে প্রি-ভোকেশনাল কোর্সে ৬ হাজার ৮২৫ জন কিশোর-কিশোরীকে সাক্ষরতার পাশাপাশি কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। স্কিলফো প্রকল্পটির আরও ১৬টি জেলায় সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি অলটারনেটিভ লার্নিং অপারচুনিটি প্রোগ্রামের মাধ্যমে ৬৪টি জেলার একটি করে উপজেলায় উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা এবং প্রাক-বৃত্তিমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ‘কার্যকর সাক্ষরতা ও ব্যবহারিক কর্মদক্ষতা’ শীর্ষক নতুন কর্মসূচির মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম দেশব্যাপী শুরু করার সব আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা জানান, ব্যুরোর জনবল কাঠামো শক্তিশালীকরণ, কার্যক্রমের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ, উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা সম্প্রসারণ, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দক্ষতা ও জীবিকায়নভিত্তিক সাক্ষরতা কার্যক্রম, প্রযুক্তিনির্ভর সাক্ষরতা ও জীবনব্যাপী শিক্ষা কার্যক্রম জোরদারকরণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।