বাংলাদেশে বন্ধ হয়ে গেছে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনে সারা দেশে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে সরকার দিনে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাজস্ব আদায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।

প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খানকে অপসারণের দাবিতে চলমান ‘শাটডাউন ও মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচির কারণে রাজস্ব আহরণকারী এ সংস্থার সব সেবা বন্ধ আছে।

চট্টগ্রাম বন্দর, বেনাপোল, ঢাকা কাস্টমস হাউসসহ দেশের সব কাস্টমস হাউস ও শুল্ক স্টেশনে কার্যক্রম বন্ধ। এতে আমদানি–রপ্তানিতে সব ধরনের শুল্কায়ন কার্যক্রম বন্ধ আছে। এসব শুল্ক বন্দর ও আমদানি রপ্তানি থেকে সরকার প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পেয়ে থাকে। কিন্তু এখন তা আদায় হচ্ছে না।

অর্থবছরের শেষ সময় জুন মাসে এমনিতে রাজস্ব আদায়ে বেশ গতি থাকে। সেজন্য শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও দেশের সব শুল্ক–কর কার্যালয় খোলা রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আন্দোলনের কারণে সব কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন কর্মকর্তা–কর্মচারীরা।

রবিবারও এ কর্মসূচি চলমান রাখার ঘোষণা দিয়েছে কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।’

তাদের এই কর্মসূচির ফলে ব্যবসায়ীরা তাদের আমদানিকারকরা পণ্য বন্দর থেকে খালাস করতে পারছেন না। বন্দরে পৌঁছানো পণ্য শিপমেন্টও করা যাচ্ছে না। লেইট-শিপমেন্ট এর ঝুঁকি তৈরি হওয়ায় রপ্তানিকারকদের ক্ষতিপূরণ দিতে হতে পারে।

ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, চলমান এ আন্দোলনের কারণে তাদের প্রতিদিন আড়াই হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। তাই তারা দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার আহ্বান জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার আলোচনা?

আগামী মঙ্গলবার আন্দোলনরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে আন্দোলনকারীদের তরফে তথ্য পাওয়া গেছে।

সরকারের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী আন্দোলনকারীরাও। তবে এর আগে এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে বলে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন ঐক্য পরিষদের নেতা মোনালিসা শাহরিন।

শনিবার সংবাদ সম্মেলনে সৃষ্ট এ সমস্যার জন্য চেয়ারম্যানের হটকারী সিদ্ধান্তকে দায়ী করেন ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ। তারা মনে করেন, বর্তমান চেয়ারম্যানকে দায়িত্বে রেখে গত ২৫ মে সরকার প্রেস বিজ্ঞপ্তির আলোকে রাজস্ব সংস্কার সম্ভব নয়। স্পষ্টতই তিনি ফ্যাসিবাদের দোসর একটি বিশেষ গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়নে প্রতিভূ হিসেবে কাজ করছেন।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী ৪৪ আমলার যে তালিকা করা হয়েছে, তার মধ্যে এনবিআরের চেয়ারম্যানের নাম ৩ নম্বরে আছে জানিয়ে তারেক বলেন, “সংস্কার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে তিনি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা করবেন, এটাই স্বাভাবিক।”

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২১ ও ২২ জুন একাধিক আদেশের মাধ্যমে রাজস্ব সংস্কার কর্মসূচির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ‘প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলকভাবে’ বদলি করা হয়েছে। কর্মসূচিতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, এমন পাঁচ আয়কর কর্মকর্তাকে ঢাকার বাইরে অপেক্ষাকৃত কম রাজস্ব সম্ভাবনাময় দপ্তরে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়েছে। এমনকি আদেশে প্রাপ্য যোগদানকাল না দিয়েই পরবর্তী কর্মদিবসে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগদান করতে বলা হয়েছে। এটি চাকরির বিধির সম্পূর্ণ পরিপন্থি ও অবৈধ।”

হাছান মুহম্মদের অভিযোগ, এই আদেশের মাধ্যমে এনবিআর চেয়ারম্যান ‘ব্যক্তিগত জিঘাংসা’ চরিতার্থ করছেন। তিনি নিপীড়নমূলক বদলিসহ বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কারের পরিবেশ বিনষ্ট করছেন।

অনিশ্চয়তায় আমদানি-রপ্তানি

শনিবার দেশের কাস্টম হাউসগুলোতে বেশিরভাগ অফিস ফাঁকা দেখা গেছে, কর্মীরা ছিলেন অনুপস্থিত। আমদানি পণ্য পরিশোধ এবং রপ্তানি শিপমেন্টের কাস্টমস প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে স্থগিত রয়েছে।

আগে অনুমোদিত চালানগুলোও খালাস হচ্ছে না, কারণ বন্দরের গেটগুলিতে স্থাপিত কাস্টমস কর্মকর্তারা পোর্ট কর্তৃপক্ষের দ্বারা প্রয়োজনীয় স্ক্যানিং ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছেন না।

তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোগ নিরা ফ্যাশনের অপারেশন ম্যানেজার জুয়েল আহমেদ বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দরে ১২টি কন্টেইনারে টি-শার্টের একটি শিপমেন্ট সিঙ্গাপুরের জন্য রওয়ানা হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু এখন আমরা জানি না এই শাটডাউন কতদিন চলবে।”

প্যাসিফিক জিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এম তানভীর বলেন, “গত কয়েকদিন ধরে আমদানি পরিষেবা বন্ধ থাকলেও রপ্তানি কার্যক্রম চলছিল। কিন্তু আজ থেকে রপ্তানি সম্পর্কিত নথিপত্র এবং শিপমেন্টও বন্ধ হওয়ায় রপ্তানিকারকরা মারাত্মক সমস্যায় পড়েছেন। সময়মত পণ্য না পাঠাতে পারলে বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।”

Tags :

News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

 People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025