বাংলাদেশে বছরে ২০ হাজার আত্মহত্যা, অধিকাংশই কিশোরী

বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ২০ হাজার ৫০৫ জন আত্মহত্যা করেন। তাদের মধ্যে ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশ কিশোরী। ১৫ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। আর শহরের চেয়ে আত্মহত্যার হার গ্রামে বেশি।

সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

এমন প্রেক্ষাপটে আজ বুধবার নানা আয়োজনে দেশে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘আত্মহত্যা সম্পর্কে প্রচলিত নেতিবাচক ধারণা পরিবর্তন করে সহানুভূতিশীল ও সহায়ক আলোচনার পরিবেশ গড়ে তোলা’।

২০২২-২৩ সালে সিআইপিআরবির এ জরিপ বাস্তবায়নে অর্থায়ন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি। গত বছর জরিপের ফলাফল প্রকাশিত হয়। জরিপে অংশ নেন বিভিন্ন অঞ্চলের এক লাখ ৮৩ হাজার মানুষ।

২০১৬ সালেও সংস্থাটি এ ধরনের জরিপ করেছিল। সে সময় ২৩ হাজার ৮৬৮ জন আত্মহত্যা করেছিল, যা প্রতি লাখে ছিল ১৪ দশমিক ৭ জন। সর্বশেষ জরিপে প্রতি লাখে আত্মহত্যার হার ১২ দশমিক ৪ শতাংশ।

সিআইপিআরবির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক এ কে এম ফজলুর রহমান বলেন, দেশে আত্মহত্যার প্রবণতা হয়তো কিছুটা কমেছে। তবে এখনও বহু মানুষ আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিশোর বয়সে নানা কারণে হতাশা তৈরি হয়, যা থেকে বিষণ্নতা দেখা দিতে পারে। যথাসময়ে চিকিৎসা বা কাউন্সেলিং করা না হলে বিষণ্নতা আত্মহত্যার দিকে যেতে পারে। কিশোরীদের আত্মহত্যা প্রতিরোধে সম্মিলিত উদ্যোগ ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ এখন সময়ের দাবি।

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাহউদ্দিন কাউসার বিপ্লব বলেন, বিশ্বে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। তারা এ বয়সে ব্যর্থতা মোকাবিলা করার শিক্ষা অনেক সময় পরিবার ও সমাজ থেকে পায় না। একটুতেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। অভিভাবকদের উচিত সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেওয়া। তাদের সঙ্গে সময় কাটানো ও অনুভূতিকে গুরুত্ব দেওয়া। সময়মতো সঠিক সেবা দেওয়া গেলে আত্মহত্যার অনেক ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য বলছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রতিবছর দুই লাখ ৮ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যা প্রতিরোধে চারটি সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। এগুলো হলো আত্মহত্যা পদ্ধতির (বিষ, অস্ত্র) সহজপ্রাপ্যতা সীমিত করা, আত্মহত্যা নিয়ে গণমাধ্যমে দায়িত্বশীল প্রতিবেদন করা, কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে সামাজিক ও আবেগীয় দক্ষতা গড়ে তোলা এবং আত্মহত্যা ও আত্ম-আঘাতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দ্রুত চিহ্নিত করে সহায়তার ব্যবস্থা করা।

গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক ড. ক্যাথরিন বোহেম বলেন, আত্মহত্যা প্রতিরোধযোগ্য। এজন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। ব্যক্তিগত সংকট মোকাবিলার চেয়ে সম্মিলিত সংকট নিরসন করা জরুরি। নীরবতা ও লজ্জার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে বোঝাপড়া এবং সহমর্মিতার পরিবেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।

সিআইপিআরবি জরিপে শহরের তুলনায় গ্রামীণ এলাকায় আত্মহত্যার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি বলা হয়েছে। গ্রামে বেকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। শহরে ৭ দশমিক ৯২ শতাংশ আত্মহত্যার পথ বেছে নিলে গ্রামে এ হার ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ।

জরিপে বলা হয়েছে, ১৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী কিশোরীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার প্রতি লাখে ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশ। তরুণ-তরুণীদের (১৮ থেকে ২৪ বছর) মধ্যে এ হার ২৮, ২৫ থেকে ৩৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ১৭ দশমিক ২, ৪০ থেকে ৬০ ঊর্ধ্বদের মধ্যে ১৬ দশমিক ২ এবং ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ।

আত্মহত্যার পদ্ধতির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে গলায় ফাঁস, ৫০ দশমিক ৯ শতাংশ। এর পর বিষপান, ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মেখলা সরকার বলেন, কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা কম। বেশির ভাগ সময় তারা ছোটখাটো মানসিক উদ্বেগকে গুরুত্ব দেয় না। ফলে বড় ধরনের মানসিক সংকটে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। স্কুল পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা চালু এবং শিক্ষকদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণের পরামর্শ দেন তিনি।

Tags :

News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025