আজ ১৫ আগস্ট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫০তম প্রয়াণ দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যসহ মোট ২৬ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত।
ওই রাতে ঘাতকদের মূল লক্ষ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর পুরো পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া। তবে সৌভাগ্যক্রমে তার দুই কন্যা, শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা, তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান।
অনেকে দাবি করেন যে, শেখ মুজিবের শাসনে ক্ষুব্ধ হয়ে কিছু বিপথগামী সেনা সদস্য এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল। কিন্তু এই দাবির পেছনের যুক্তি তারা দিতে পারেন না, কারণ তারা ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হন যে কেন শিশু রাসেলসহ পরিবারের অন্য সদস্যদেরকেও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই নয়, তার স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেল, দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, এবং বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসেরকেও নির্মমভাবে হত্যা করে।
হত্যাকাণ্ডের খবর শুনে বঙ্গবন্ধুকে বাঁচাতে ছুটে আসা নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল, এসবির কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান ও সেনা সদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হককেও সেদিন হত্যা করা হয়।
একই রাতে ঘাতকরা হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে, যুবলীগ নেতা শেখ মনি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনিকে। একই সময়ে হামলা করা হয় বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায়। সেখানে হত্যা করা হয় সেরনিয়াবাত, তার কন্যা বেবী, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত বাবু, ভাগ্নে সজীব সেরনিয়াবাত এবং এক আত্মীয় রেন্টু খানকে।
এই হত্যাকাণ্ডের বিচার বন্ধ করতে একটি ইনডেমনিটি আইন পাস করা হয় এবং খুনিদের দেশের বাইরে নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করা হয়।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১৫ আগস্টকে রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করে। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আবারও এই দিবসকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করে। তবে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় শোক দিবস ও সরকারি ছুটি বাতিল করেছে।
সাধারণত, শোক দিবসে আওয়ামী লীগ ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে, টুঙ্গিপাড়ায় তার সমাধিসৌধে এবং বনানী কবরস্থানে নিহতদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করতো। এছাড়া, বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে মিলাদ ও বিশেষ প্রার্থনা এবং কাঙালিভোজের আয়োজন করা হতো।
বর্তমানে, ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে এ বছর ১০ মে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার। গত বছর ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ১৫ আগস্ট উপলক্ষে শোক জানানো হয়েছে।
এদিকে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বিরোধী আন্দোলনের মুখে নিজের জীবন বাঁচাতে শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন এবং তখন থেকে তিনি দিল্লিতে অবস্থান করছেন।