গ্রামীণ ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা আর দেশের বাজার ব্যবস্থা এক নয়

বাজার ব্যবস্থা ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা না যে চালের টিন, গোয়ালের গরু জব্দ করে কিস্তি আদায় করা যাবে। বাজার অর্থনীতি কোনও র‌্যাডিক্যাল সন্ত্রাস, মব ভায়েলেন্স, নতুন গজিয়ে ওঠা সরকারি মদদপুষ্ট ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীর হুমকির তোয়াক্কা করে না। অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে আজ বাংলাদেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে।

ব্যবসায়ীদের বড় অংশকে ‘লীগের লোক’ ট্যাগ দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। বড় বড় গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির অনেকগুলোই বন্ধ। চাকরিচ্যুত শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় দু্ই লাখ। আড়াইশ’র মত গার্মেন্ট বন্ধ। প্রতিষ্ঠিত গার্মেন্ট কারখানাতেও তিন-চার মাস ধরে বেতন বন্ধ। এই সেক্টরের কাঁচামালের প্রায় ৯০ ভাগই আসত ভারত থেকে। আসা বন্ধ।

গার্মেন্ট সেক্টরের সবচেয়ে বড় আঘাত-ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট এবং ল্যান্ড পোর্ট ব্যবহার সুবিধা বাতিল। এতে করে কেজি প্রতি এক্সপোর্ট কস্ট ১.২০ ডলার থেকে বেড়ে ৩.২০ ডলার হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৩ বার মাধ্যম বদলে ইউরোপে পণ্য পাঠাতে গিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছাতে পারছে না। শিপমেন্ট কস্টিং বেড়ে যাওয়ায় কমে গেছে ওয়েজ।

ব্যাংকগুলোতে স্থবির অবস্থা। ব্যাংক থেকে কেউ ইন্ডাস্ট্রিয়াল লোন নিচ্ছে না। লিক্যুইডিটি বেড়ে গেছে।

গত রমজানে জামাত তাদের সিন্ডিকেটকে এক মাস স্টপ রাখে এবং সরকার ভর্তুকি দিয়ে পণ্যমূল্য কম রেখে সুনাম কিনতে চেয়েছিল। ঈদের পর পরই বাজার আবার ঊর্ধ্বমুখি।

বিপিসি, তিতাস বিবৃতি দিয়ে ব্যাখ্যা দিলেও প্রকৃত সত্য হচ্ছে অনেক কারখানা পর্যাপ্ত গ্যাস পাচ্ছে না। চীন থেকে কাঁচামাল আনতে হচ্ছে তিনগুন দামে। তাতে ওয়েজ আরও কমে যাচ্ছে। কারখানাগুলো সেই লোকসান মেটাচ্ছে বেতন না দিয়ে কিংবা অর্ধেক দিয়ে।

চলছে বেশুমার চাঁদাবাজি। চাঁদাবাজিতে বিএনপি, জামাত শীর্ষে। সঙ্গে নতুন মব বাহিনী। বিএনপি চাঁদাবাজি ঠেকাতে চেয়েও পারছে না। কর্মীরা পাত্তা দিচ্ছে না। জামাতের চাঁদাবাজি চলছে নিখুঁত সিস্টেমে যাতে কেউ টের না পায়, পেলেও বলতে-লিখতে না পারে। জামাতের চাঁদাবাজির রিপোর্ট লিখে সাংবাদিকের চাকুরিচ‍্যুত হওয়ার খবরও আছে। ব‍্যাবসায়ীদের অনেকেই হুমকি ও চাঁদাবাজির শিকার হয়ে ব‍্যাবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন। অনেকে নিরাপত্তার ভয়ে মুখ খুলছে না।

আগামী কিছুদিনের মধ্যেই দেশের শিল্প কারখানাগুলোর অর্ধেক বন্ধ হয়ে যাবে হয়তো। বিশেষ করে কাঁচামালের জন্য ভারতের ওপর নির্ভরশীল কারখানাগুলো। চাকরি হারাবে হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী।

ওদিকে ভারতের পাটনা থেকে উত্তরপ্রদেশজুড়ে শত শত নতুন গার্মেন্ট কারখানা গড়ে উঠছে, যেখানে বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া অর্ডারগুলো চলে যাচ্ছে।

ট্রান্সশিপমেন্ট, ল্যান্ড করিডোর, দিল্লির এয়ার ডাম্পিং ফ্যাসিলিটি বন্ধ হওয়ার পর আসতে যাচ্ছে ভারতের খাদ্যপণ্য রফতানির নিষেধাজ্ঞা। ভারতের বিরুদ্ধে ‘কামান দাগা’র পরিণতিতে এখন পর্যন্ত ভারত ‘নিষেধাজ্ঞা’ মোডে থাকলেও খুব বেশিদিন থাকবে না। ‘সেভেন সিস্টারস’ নিয়ে ধূর্ত মহাজনের দূরভিসন্ধি আর চ্যালাদের অতিরিক্ত চুলকানির কড়া জবাব আসতে পারে যে কোনও অযুহাতে। অসমের মূখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার ‘টু চিকেন নেকস অব বাংলাদেশ’ থিওরি সেটারই ইঙ্গিত দেয়।

এনবিআর সংকটে নতি স্বীকার করলেও সরকার সচিবালয়ে ‘জুলাই যোদ্ধা’ নিয়োগ দিতে কৌশলে অভিজ্ঞ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে নিবর্তনমূলক আইন পাশ করে আগুনে ঘি ঢেলেছে। সচিবালয় এখন অগ্নিগর্ভ। কর্মচারীদের অসহযোগের মধ্যেই ঘোষণা এসেছে মঙ্গলবার থেকে সকল সচিবালয়ে দুই দিনের কলমবিরতী। আজ-কালের মধ্যেই সচিবালয়ে বলপ্রোয়োগের ফলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।

এইসকল সংকট থেকে দৃষ্টি ফেরানোর কৌশল হিসাবে লাগাতার ভারতবিরোধী কার্ড খেলা হচ্ছে। বিএনপি-জামাতের পরে এখন বাম নামধারী সাড়ে ৩ জনের দলগুলোকে দিয়েও মুহাম্মদ ইউনূস ভারতবিরোধী চাল চালতে চাইছেন। এই দলগুলোও ‘ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা’র মত ‘দেশের সকল সংকটের পেছনে ভারত’ এমন অভিযোগ প্রচার করছে। জনগণণকে বিভ্রান্ত করে ভারতবিদ্বেষী জোয়ারে নিজেদের সার্বিক ব্যর্থতা ঢাকতে চাইছে।

দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, গ্লোবাল পলিটিক্স, সব জায়গা ঘুটে দিয়েছে। এসবের আড়ালে রাখাইন করিডোর, চট্টগ্রাম বন্দর ভাড়া দেওয়ার সিলসিলা বাস্তবায়ন করে পশ্চিমা প্রভুর আজ্ঞা পালন করতে চাইছে এই সরকার।

এতকিছু করেও কি শেষ রক্ষা হবে? না, হবে না কারণ, পেটে খেলেই পিঠে সয়। আগামী কিছুদিনের মধ্যে দেশে দুর্ভিক্ষ আসতে পারে। এইসব ফাঁপা বক্তৃক্তাবাজী, মাস্তানি, মব ভায়োলেন্স, যুদ্ধাবস্থা দেখিয়ে রাজনৈতিক কূটচালে দীর্ঘস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকার দূরভিসন্ধি বাজার ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।

ক্ষমতার ‘পিঠে ভাগ’ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ব্যাতীব্যস্ত। ছোট-বড় দলগুলো সবাই ক্ষমতায় বসার স্বপ্ন দেখছে। সাড়ে ৩ জনের পার্টিও মনে করছে ‘তাকে যেহেতু চা-কফি খাইয়ে ফটো তুলেছে’ সুতরাং আগামী সরকারে তারাও অংশীদার। তাই এইসব দলগুলো বর্তমান চরম সংকটকালে জনগণকে নিয়ে রুখে দাঁড়াচ্ছে না। জনগণ এটা কতক্ষণ সহ্য করতে পারবে? যতক্ষন তাদের পেটে ভাত আছে। ভাতের সংকট শুরু হলে তারা দল বা নেতার ডাকের অপেক্ষা করবে না। কাতারে কাতারে পথে নেমে আসবে। অল পার্টিস, গভর্নমেন্ট এন্ড অল দ্য ইসফ্লুয়েন্সার অব দ্য গভর্নমেন্ট উড বি ওয়েটিং ফর দ্যাট রিয়্যাল অ্যানার্কি।

Tags :

Monjurul Haque

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

 People’s Agenda

Quick Links

Copyrights are reserved by NE News © 2025, Jun 15