আওয়ামী লীগের কার্যক্রম গেজেটের মাধ্যমে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ হলেও অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দলটিকে নিষিদ্ধ করা হয়নি।
যুক্তরাজ্যের লন্ডনের চ্যাথাম হাউসে এক আলোচনায় মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়নি। তবে জনগণের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে দলটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
সাক্ষাৎকারমূলক আলোচনা পর্ব পরিচালনা করেন চ্যাথাম হাউসের পরিচালক ব্রনওয়েন ম্যাডক্স।
তার এক প্রশ্নের জবাবে ইউনূস বলেন, “রাজপথে তাদের (আওয়ামী লীগ) মিছিল ও অভ্যুত্থানের নেতাদেরসহ হুমকিধামকির কারণে আমরা নিরাপদ বোধ করছি না। সুতরাং দেশের নিরাপত্তা ও দেশের রাজনীতির নিরাপত্তার জন্য জাতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, একটা সময়ের জন্য আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত করা হবে। এটাই যা আমরা করেছি।”
ইউনূস বলেন, “আমরা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করিনি। আমরা কিছুই করিনি-অন্তত বিচার না হওয়া পর্যন্ত।”
তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল কি না সেটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তারা যদি তরুণদের এভাবে রাস্তায় হত্যা করতে পারে, মানুষকে গুম করে ফেলে, টাকা চুরি করে-তাহলে কি আপনি এটাকে রাজনৈতিক দল বলবেন? সুতরাং, এটা বিতর্কের বিষয়। কোনো মতামত নয়।”
“এই আলাপটি শুরু হয়েছিল গত ৫ আগস্টেই যখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। সারা দেশের মানুষ উদযাপন করছিল, যে শেষমেশ আমরা মুক্ত। আমরা ৫ আগস্টেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী চলে যাওয়ার পর এর শেষ টেনে দিয়েছিলাম। আমাদের জন্য, এই অধ্যায় শেষ। এখন এটা তাদের ছাড়াই একটা দেশ।”
ইউনূস বলেন, “তবে তাদের জন্য (আওয়ামী লীগ) এটা শেষ হয়নি। তারা অন্য দেশে পালিয়ে থেকে একই কাজ করে যাচ্ছে। লোকজনকে উসকানি দিচ্ছে। রাস্তায় মারামারি করছে। দশ মাস পেরিয়ে গেলেও দলটি কোনো অনুশোচনা প্রকাশ করেনি।”
যদিও এক মাস আগেই দুই দিনের আন্দোলনের পর প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের রাজনীতি ‘আপাতত’ নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেওয়া হয়। ১০ মে সাংবাদিকদের সামনে সরকারের সভার সিদ্ধান্ত পড়ে শোনান আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, “উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাস বিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।”
দুদিন পরে ১২ মে বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম ‘নিষিদ্ধ’ করে গেজেট জারি করে সরকার।
ম্যাডক্সের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে নির্বাচনের আগেই ঐক্যমতের ভিত্তিতে আগামী জুলাই মাসে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা করা হবে বলেও জানান ইউনূস। তিনি সরকারের তিনটি লক্ষ্যের কথাও জানিয়েছেন। এগুলো হলো সংস্কার, হত্যাকাণ্ড ও গুমের বিচার এবং নির্বাচন।
সাক্ষাৎকারগ্রহীতা প্রশ্ন করেন, আওয়ামী লীগের বিচারের দায়িত্ব কেন নির্বাচিত সরকারের হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে না?
জবাবে ইউনূস বলেন, “আমি এই সিদ্ধান্ত নিইনি। জনগণ এই দায়িত্ব আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে। তারা আমাদের (অন্তর্বতী সরকারকে) তিনটি বিষয়ের দায়িত্ব নিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আমরা সেই তিনটি কাজই করছি।”
অন্তবর্তী সরকারের সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ইউনূস বলেন, “এটা সত্য নয়। গণমাধ্যম (বাংলাদেশের) তার সারাজীবনে এতো স্বাধীনতা পায়নি। তারা যা খুশি তাই বলতে পারছে।”
চার দিনের সরকারি সফরে ইউনূস মঙ্গলবার সকালে লন্ডন পৌঁছান। ১৪ জুন ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টার।