সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের ‘বিচারের স্বচ্ছতা’ নিশ্চিত করা হয়েছে টেলিভিশনে প্রচার করে। ‘স্বচ্ছতা’ বলতে এটাই এখন বুঝানো হচ্ছে। বিচার হচ্ছে একতরফা, যেখানে বিবাদীর পক্ষে আইনজীবী নাই।
আইনজীবী নাই বললে আবার পুরো সত্য বলা হবে না। আইনজীবী আছে, তবে সেটা শোনা যাচ্ছে সরকারপক্ষের আইনজীবীর জুনিয়র, এবং জামায়াতে ইসলামীর কর্মী।
এটা সেই আজহারুলের অবস্থা হয়ে গেছে, বাদী-বিবাদী সব পক্ষ মুক্তি চায়। উপদেষ্টা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ওরফে আসিফ নজরুলের প্রতিক্রিয়া এখানে উল্লেখ্য; তিনি বলেছেন, ন্যায়বিচার।
অদ্যকার এই মামলায় অবশ্য বাদী-বিবাদী সব পক্ষ শাস্তি চায়। পরিহাস নয়, চলমান বাস্তবতা উল্লেখ করছি।
সুযোগ পেলে কি এই ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা আইনজীবী নিয়োগ দিতেন? আমার ধারণা দিতেন না। কারণ এই ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছিল একাত্তরের জেনোসাইডকারী ও এর সহযোগীদের বিচার করতে। এখন দেশ তাদের দখলে যারা একাত্তরের জেনোসাইডকেই অপরাধ ভাবে না। তাই দণ্ডিতের খালাস সরকারের কাছেও আনন্দের।
রাষ্ট্রীয় ও ইতিহাসের দায় চুকাতে যে ট্রাইব্যুনালের জন্ম, সেটাতে এখন রাজনৈতিক বিচার চলছে। এটা করা উচিত হয়নি সরকারের। রাজনৈতিক বিচার যদি করতেই হয়, তবে এই ট্রাইব্যুনালকে ব্যবহার না করাই সংগত ছিল। তারা পৃথক ট্রাইব্যুনাল করতে পারত।
বলছিলাম, আইনজীবী নিয়োগের কথা। আচ্ছা, চাইলে কাউকে আইনজীবী নিয়োগ দিতে পারবে আওয়ামী লীগের নেতারা? পারবে না। কারণ সরকার দেশে আওয়ামী লীগকেই নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। তাদের বিপক্ষে যায় এমন কিছু শুনলে ‘আওয়ামী দোসর’ আখ্যা দিয়ে পেটাতে আসে, হত্যা করতে আসে।
অথচ স্মরণ করে দেখুন, আজকের আইসিটির রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তাজুল ইসলামের কথা। পুরো আওয়ামী লীগের আমলে তিনি একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত সকল যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে আইনি লড়াই করে গেছেন। কখনো বাধাপ্রাপ্ত হননি। নিরাপদে থেকেছেন আওয়ামী লীগের পুরোটা সময়। সরকার কেন, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের কেউ তাকে উত্যক্ত করেনি, নিরাপত্তা হুমকিতে ফেলা তো দূরের কথা।
একাত্তরের জেনোসাইডকারী এবং ওদের সহযোগীদের একজন আইনজীবীর এই সুরক্ষা তার নাগরিক অধিকার ছিল। এবং সেটা তিনি উপভোগ করেছেন। কিন্তু এখন তারা যখন বিপুল ক্ষমতার অধিকারী, তখন নাগরিকের সেই নাগরিক-অধিকারকে সম্মান দিচ্ছেন? দিচ্ছেন না তো!