উগ্রবাদীদের চাপাতির কোপে নিহত বিজ্ঞানমনষ্ক লেখক-ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশের ৪৩তম জন্মদিন আজ। ১৯৮২ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
২০১৫ সালের ১২ মে সকাল সাড়ে ৮টায় সিলেট নগরীর সুবিদবাজার এলাকায় নিজ বাসার অদূরে অনন্ত বিজয় দাশকে কুপিয়ে হত্যা করে ধর্মীয় উগ্রবাদী সন্ত্রাসীরা।
সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেন অনন্ত বিজয়। এরপর কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন পূবালী ব্যাংকে। পূবালী ব্যাংক সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার জাউয়াবাজার শাখায় আইটি হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি।
অনন্ত বিজয় দাশ ছিলেন বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানমনস্কতার ছোট কাগজ ‘যুক্তি’র সম্পাদক। মানবতা এবং যুক্তিবাদ প্রতিষ্ঠায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০৬ সালে মুক্তমনা ন্যাশনালিস্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।
তার প্রকাশিত গ্রন্থ: (১) পার্থিব, (সহ-লেখক সৈকত চৌধুরী), শুদ্ধস্বর, ঢাকা, ২০১১। (২) ডারউইন : একুশ শতকে প্রাসঙ্গিকতা এবং ভাবনা, (সম্পাদিত), অবসর, ঢাকা, ২০১১। (৩) সোভিয়েত ইউনিয়নে বিজ্ঞান ও বিপ্লব : লিসেঙ্কো অধ্যায়, শুদ্ধস্বর, ঢাকা, ২০১২। (৪) জীববিবর্তন সাধারণ পাঠ (মূল: ফ্রান্সিসকো জে. আয়াল, অনুবাদ: অনন্ত বিজয় দাশ ও সিদ্ধার্থ ধর), চৈতন্য প্রকাশন, সিলেট, ২০১৪।

২০১৬ সালের ১২ মে অনন্ত হত্যার প্রথম বার্ষিকীতে এলাকাবাসীর সহায়তায় প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী মঈনুদ্দিন আহমদ জালালের (বর্তমানে প্রয়াত) ব্যবস্থাপনায় ঘটনাস্থলে অস্থায়ীভাবে নির্মিত একটি দেয়াল-স্মৃতিস্তম্ভ উন্মোচন করা হয়েছিল। সেখানে ছিল ‘জ্ঞানের জ্যোতি ছড়াবে অনন্ত, অনন্তকাল’ শীর্ষক স্মৃতিলিখন। ২০২৪ সালের আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরপরই অস্থায়ীভাবে নির্মিত ওই দেয়াল-স্মৃতিস্তম্ভের লেখা মুছে ফেলা হয়।

অনন্ত বিজয়ের বন্ধু সিলেটের সুপরিচিত শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মী অরূপ বাউলের নকশায় নির্মিত দেয়াল-স্মৃতিস্তম্ভে তরবারির আদলের উপরিভাগে ছিল লাল কলমের মুখ। তরবারির আদলের কালো জমিনে সাদা অক্ষরে লেখা ছিল ‘জ্ঞানের জ্যোতি ছড়াবে অনন্ত, অনন্তকাল’। এরও নিচে লেখা- ‘ওই খানে আমিও আছি, যেখানে সূর্য উদয়/প্রিয় স্বদেশ পাল্টে দেব তুমি আর আমি বোধ হয়’। এ ছাড়া দেয়াল-স্মৃতিস্তম্ভে অনন্তর নাম এবং জন্ম ও মৃত্যুতারিখ উল্লেখ করা ছিল।
স্থানীয়রা তখন জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর সিলেটের একাধিক স্থানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরে অনন্ত স্মরণে নির্মিত দেয়াল-স্মৃতিস্তম্ভের লেখা কে বা কারা মুছে দেয়।




