বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (ICT) কর্তৃক ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের অনুপস্থিতিতে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অবিলম্বে এই রায়ের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছে, এই বিচার প্রক্রিয়া “ন্যায্য বা ন্যায়সঙ্গত কোনোটাই নয়” এবং এটি ‘২৪ সালে হত্যার শিকারদের জন্য সত্যিকারের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ।
এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড মন্তব্য করেছেন যে, মৃত্যুদণ্ড মানবাধিকার লঙ্ঘনকে আরও গুরুতর করে তোলে এবং বিচার প্রক্রিয়ার অংশ হতে পারে না।
ন্যায্য বিচারের ঘাটতি:
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদের বিবৃতিতে ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। তারা মনে করে, এত বড় মাপের একটি মামলায় এতো দ্রুততার সাথে রায় ঘোষণা এবং আসামির অনুপস্থিতিতে বিচার সম্পন্ন করার ফলে ন্যায্য বিচার পাওয়ার মৌলিক অধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে।
অ্যামনেস্টি দীর্ঘদিন ধরে এই ট্রাইব্যুনালের স্বাধীনতার অভাব এবং অন্যায্য বিচারিক পদ্ধতির জন্য সমালোচনা করে আসছে। সংস্থাটি বলছে, এমন একটি আদালতের মাধ্যমে বিচার পরিচালিত হয়েছে, যা আগে থেকেই পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে অভিযুক্ত।
যদিও শেখ হাসিনার পক্ষে আদালত-নিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন, তবুও মামলার ব্যাপকতা ও জটিলতা বিবেচনা করে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য সময় স্পষ্টতই অপর্যাপ্ত ছিল। গুরুতর অভিযোগ উঠেছে যে, আসামিপক্ষকে তাদের যুক্তিতর্কের বিপরীতে সাক্ষ্য-প্রমাণ জেরা করার সুযোগ দেওয়া হয়নি—যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ন্যায্য বিচারের অন্যতম প্রধান শর্ত।
অ্যাগনেস ক্যালামার্ড জোর দিয়ে বলেন, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বর্বরতার শিকার হওয়া ব্যক্তিরা এর চেয়ে অনেক ভালো বিচার প্রত্যাশা করে। বিচারকাজ সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ এবং পক্ষপাতিত্বের সব সন্দেহের ঊর্ধ্বে না গেলে সত্যিকারের ও অর্থপূর্ণ ন্যায়বিচার এবং ক্ষতিপূরণ কখনোই নিশ্চিত করা যাবে না। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মনে করে, এসব নৃশংস অপরাধের জন্য দায়ীদের অবশ্যই স্বাধীন ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড মেনে চলা প্রক্রিয়ায় বিচার করতে হবে।
কিন্তু, মৃত্যুদণ্ডকে “চূড়ান্ত নিষ্ঠুর, অপমানজনক এবং অমানবিক শাস্তি” আখ্যা দিয়ে অ্যামনেস্টি জানায়, এটি কোনোভাবেই ন্যায়বিচারের পথ হতে পারে না। সংস্থাটি কোনো ব্যতিক্রম ছাড়াই সব পরিস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করে।
ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবিলম্বে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে হস্তান্তরের জন্য ভারতের প্রতি আনুষ্ঠানিক আহ্বান জানিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার বলেছে, দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী এই দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দেওয়া ভারতের “অপরিহার্য দায়িত্ব”।
তবে এই পরিস্থিতিতে ভারত সরকার একটি সংযত বিবৃতি দিয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা রায়টি “নোট” করেছে এবং প্রতিবেশী হিসেবে তারা বাংলাদেশের জনগণের শান্তি, গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতার সর্বোত্তম স্বার্থের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একই সাথে তারা “সব অংশীজনের সাথে গঠনমূলকভাবে যুক্ত থাকবে” বলে উল্লেখ করেছে। ভারতের কূটনৈতিক মহল মনে করছে, প্রত্যর্পণ চুক্তিতে ‘রাজনৈতিক অপরাধ’-এর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থাকার কারণে ভারতকে সহজে শেখ হাসিনাকে ফেরত দিতে বাধ্য করা যাবে না।





