আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহত ছয় শতাধিক

আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬০০ ছাড়িয়েছে এবং ১ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।

সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বার্তাসংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রবিবার (৩১ আগস্ট) গভীর রাতে দেশটির পূর্বাঞ্চলে ৬ মাত্রার ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। প্রয়োজনীয় উদ্ধার সরঞ্জাম এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা না থাকায় ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক মহলকে সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে তালেবান সরকার।

জানা গেছে, তালেবান-নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে ১,৫০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন এবং প্রাণ গেছে ৬২২ জন। এর আগে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারক রেডিও টেলিভিশন আফগানিস্তান (আরটিএ) মৃতের সংখ্যা প্রায় ৫০০ বলে জানায়।

দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উদ্ধারকারীরা ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছে। কুনার প্রদেশে তিনটি গ্রাম ধ্বংস হয়ে গেছে এবং আরও অনেক গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেও জানায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শরাফাত জামান এক বিবৃতিতে বলেন, হতাহতের সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রয়টার্স প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, হেলিকপ্টারগুলো আহতদের সরিয়ে নিচ্ছে। বাসিন্দারা আহতদের অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যেতে সেনা ও চিকিৎসকদের সাহায্য করছেন। মাত্র কয়েকটি ক্লিনিকের পরিসংখ্যানে ৪০০ জনেরও বেশি আহত এবং কয়েক ডজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।

আফগানিস্তানের রাষ্ট্রীয় সংবাদসংস্থা বাখতার জানিয়েছে, আহতদের চিকিৎসা দেয়া স্থানীয় হাসপাতালগুলোকে সহায়তা করার জন্য আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ৩০ জন ডাক্তার এবং ৮০০ কেজি সরঞ্জাম ওষুধ কুনারে পাঠিয়েছে।

জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের প্রধান তালেবান নেতা মোল্লা নূরউদ্দিন তুরাবও সংকট মোকাবিলার প্রচেষ্টা তদারকি করার জন্য কুনারে পৌঁছেছেন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।

এই ভূমিকম্পটি বিশেষভাবে ভয়াবহ ছিল কারণ এটি মাত্র ৫ মাইল গভীরতায় আঘাত হানে, এমনকি মাঝারি মাত্রার ক্ষেত্রেও এটি আরও ধ্বংসাত্মক হয়ে ওঠে। ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাকিস্তান সীমান্তবর্তী কুনার প্রদেশের নোরগাল জেলা। তালেবান সরকার জানিয়েছে, কুনারে শত শত মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আফগানিস্তান ভূমিকম্পের ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। কারণ এটি এমন একাধিক ফল্ট লাইনের ওপর অবস্থিত যেখানে ভারতীয় ও ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেট মিলিত হয়েছে।

এর আগে ২০২২ সালে মাত্র ৫ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে অন্তত এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছিলেন এবং আহত হয়েছিলেন অন্তত তিন হাজার মানুষ। ওই ভূমিকম্পটি আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে আঘাত হেনেছিল। গত দুই দশকে এটিই ছিল দেশটির সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পজনিত দুর্যোগ।

যদিও সেই ভূমিকম্পটি ছিল মাঝারি মাত্রার। কিন্তু ধ্বংসাত্মক হয়ে ওঠে, কারণ এর কেন্দ্র ছিল অগভীর মাত্র ১০ কিলোমিটার বা ৬ মাইল গভীরে। গতকাল রবিবারের ভূমিকম্পটির কেন্দ্র আরো অগভীর ছিল, মাত্র ৮ কিলোমিটার বা ৫ মাইল গভীরে। এখন পর্যন্ত এই ভূমিকম্পে ৬২২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

আফগানিস্তানের বাসিন্দারা খুব বেশি ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকেন। কারণ সেখানকার ভবনগুলো সাধারণত কাঠ, কাদামাটির ইট বা দুর্বল কংক্রিট দিয়ে নির্মিত। যেগুলো একেবারেই ভূমিকম্প সহনশীল নয়।

আফগানিস্তানের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিকম্পের কারণে ক্ষয়ক্ষতির আরেকটি বড় কারণ হলো ভূমিধস। ভূমিধসে ঘরবাড়ি মাটির নিচে চাপা পড়ারও শঙ্কা দেখা দেয়। এছাড়া ভূমিকম্পের সময় সড়কপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উদ্ধারকর্মী ও সরঞ্জাম দুর্গম এলাকায় পৌঁছাতে বড় ধরনের বাধার মুখে পড়তে হয়।

Tags :

News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025