গত বছরের ১৯ জুলাই রাত সাড়ে ১১টায় ঢাকার রায়েরবাগ বিশ্বরোড দিয়ে যাওয়ার সময় এক মোটরসাইকেল আরোহীকে তাড়া করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা। তাদের তাড়া খেয়ে মোটরসাইকেল আরোহী রাস্তার পাশে পড়ে গেলে সাথে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করে পুলিশের পোশাক ও আইডি কার্ড দেখতে পায়। তখন তারা পুলিশ পুলিশ বলে চিৎকার করে। তাদের চিৎকারে আশপাশের অনেকে সেখানে জড়ো হয়। এ সময় তাদের হাতে থাকা হকিস্টিক, বাঁশ, লাঠি ইত্যাদি দিয়ে ওই পুলিশ সদস্যকে মারতে থাকে। ঘটনাস্থলেই পুলিশ সদস্যের মৃত্যু ঘটে। তার মৃতদেহ নিয়ে তারা উল্লাসে মেতে ওঠে। ওই পুলিশ সদস্যের নাম গিয়াস উদ্দিন (৫৮)। তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশে নায়েক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
পরের দিন ২০ জুলাই সকালেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। ওইদিন সকালে ডিউটিতে যাওয়ার সময় এক পুলিশ সদস্যের গতিরোধ করে হকিস্টিক, বাঁশ, লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে হত্যা করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা। এরপর তারা সেই লাশ নিয়ে ফুটওভার ব্রিজে ঝুলিয়ে রেখে আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে। পুলিশের ওই সদস্যের নাম মোহাম্মদ মুক্তাদির (৫০)। তিনি টুরিস্ট পুলিশের এএসআই ছিলেন।
বাংলাদেশ পুলিশের উপর এরকম অসংখ্য বর্বরোচিত ঘটনার কোন সুষ্ঠু তদন্ত বা বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার উদ্যোগ নেয়নি বর্তমানে দায়িত্বরত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
এই জুলাইয়ে আবারও সেইসব বর্বর হত্যাকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি করতে চায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা। চট্টগ্রামের পটিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর এমন হুমকি দিয়েছে তারা।
জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রামের পটিয়া থানার সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশের চার সদস্য ও আন্দোলনকারী পক্ষের অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন বলে উভয় পক্ষ দাবি করেছে।
মঙ্গলবার রাতের ঘটনা প্রসঙ্গে পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জাহেদ মো. নাজমুন নূর বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতার–কর্মীরা ছাত্রলীগের এক নেতাকে থানায় নিয়ে এসেছিলেন। তবে নিয়ে আসার পরে মব সৃষ্টি করে তাঁকে মারধর করা হচ্ছিল। একদল নিরাপত্তাবেষ্টনী ভেঙে থানায় মব নিয়ে ঢুকে যাচ্ছিল। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি হয়।
এদিকে, থানার ওই ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানাতে দেখা গেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অনেককে। এমনকি গত বছরের জুলাই-আগস্টের মতো নৃশংস কায়দায় পুলিশকে হত্যা করে প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে রাখার হুমকিও দিতে দেখা গেছে তাদের।
এসব হুমকির বেশ কিছু স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর দেখা দিয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। ফেসবুক ব্যবহারকারীরা এসব হুমকির তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে হুমকিদাতাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
হুমায়ুন কবির নামের একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘গতকাল পটিয়ায় একটা ঘটনা ঘটল। অনেকে সরাসরি পুলিশ হত্যার পোস্ট দিচ্ছে ফেসবুকে। ওদের অভিযোগ, পুলিশ বিনা কারণে ওদের গায়ে হাত তুলেছে। ওকে, পুলিশ বিনা কারণে হাত তুলেছে, এজন্য দেশে আইন আছে, আদালত আছে, বিচার আছে। তোমাদের দায়িত্ব, যাতে দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়, সেটা নিশ্চিত করা- যেহেতু আন্দোলনের মাধ্যমে তোমরা একটা বিজয় অর্জন করেছ। কিন্তু তোমরা আজও, এখনো, আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছ, ফেসবুকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দিচ্ছ! তাহলে লাভটা কি হলো? হয়তো এখন বলবে, আইন, আদালত ন্যায়বিচার করছে না, নিউট্রাল থাকছে না! ওয়েল, এই দায়টা কার? তোমরা এতবড় একটা বিজয় আনতে পেরেছ, আর সামান্য এই কাজটা পারছ না? এটা বিশ্বাসযোগ্য? তোমরা আসলে নিজেরাই চাচ্ছ না- দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হোক, বিচারবিভাগ স্বাধীন হোক। কারণ তা হলে তো তোমাদের আর হিরোগিরি থাকবে না, মব তৈরি করে মাস্তানি দেখাতে পারবে না। ভাই, আমার কারও সাথে শত্রুতা নেই। যে দেশটাকে সুখী, সুন্দর করতে পারবে, সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারবে, মানবাধিকার, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারবে, আমি, আমরা তাদেরই পক্ষে। এখন এটাকে তোমরা কেউ পার্সোনালি নিলে সেটা তোমাদের ব্যাপার।’
সুষুপ্ত পাঠক নামের একজন লিখেছেন, ‘কত কিছু নিয়ে লেখার আছে। ভাবছিলাম একটা পরাবাস্তব ছবির বিষয়ে কিছু লিখবো। কিন্তু এমন একটা দিন আছে যেখানে সব কিছু থেকে মন সরিয়ে নিজের জগতে বাস করবো? এটা কোন দেশের কাতারে পড়ে? পিচ্চি পিচ্চি পোলাপান দেশের মালিক হয়ে বসেছে! তারা জুলাই করে কিনে ফেলেছে দেশ! এভাবে পোস্ট দিয়ে পুলিশ মারার হুমকি হচ্ছে। বিষয়টি পুলিশকে নিয়ে ভুলে যান, যে কোনো শ্রেণির, পেশার, সম্প্রদায়ের প্রতি মব উসকানো ডাল-ভাত হয়ে গেছে! ডক্টর ইউনুস সম্ভবত এদেশের প্রতি প্রতিশোধ নিচ্ছেন! কিশোর গ্যাংদের হাতে পুরো দেশটা জিম্মি হয়ে গেছে!’
রাব্বি নুর নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘জুলাই জঙ্গিদের পুলিশ হত্যা এখন তাদের নেশায় পরিণত হয়েছে। তারা আবার পুলিশের রক্ত দেখতে চায়। পুলিশে রক্ত দিয়ে রক্তের হোলি খেলতে চায়। ৩২৮০ পুলিশ হত্যার বিচার না হওয়ায় ফের পুলিশ হত্যার নেশা চেপেছে, আবারও নৃশংসভাবে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখতে চায়!’