মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) কাতারের রাজধানী দোহায় হামলা চালায় ইসরায়েল। গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে মর্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি নতুন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করার সময় ওই হামলা চলানো হয়। হামলায় ছয়জন নিহত হন। যার মধ্যে রয়েছেন- হামাসের সিনিয়র নেতা খলিল আল হায়ার ছেলে, তিনজন দেহরক্ষী এবং কাতারের নিরাপত্তা বাহিনীর এক কর্মকর্তা। যদিও হামলা থেকে বেঁচে যান আলোচনার টেবিলে অংশ নেওয়া নেতারা।
কাতারে হামলা চালানোর বিষয়টি ছিল ইসরায়েলের বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ। গত ৭২ ঘণ্টার ব্যবধানে তেল আবিব ছয়টি দেশের ওপর হামলা চালায়। যার মধ্যে রয়েছে- ফিলিস্তিন, সিরিয়া, তিউনিশিয়া, লেবানন, কাতার ও ইয়েমেন। গত সোমবার থেকে এই হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এদিন গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ১৫০ জন নিহত এবং ৫৪০ জন আহত হয়।
ওইদিন গাজার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ৩২০ জন আহতদের মধ্যে ৬৭ জনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন আরও ১৪ জন এবং দুর্ভোগের কারণে দুই শিশুসহ ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া মঙ্গলবার ইসরায়েলের হামলায় ৮৩ জন নিহত এবং ২২৩ জন আহত হয়।
ইসরায়েল অব্যাহতভাবে গাজায় ভয়াবহ হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। নতুন করে উঁচু ভবন ধস এবং জোরপূর্বক ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করছে। যদিও গাজায় নিরাপদ কোনো আশ্রয় নেই।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এতে এখন পর্যন্ত ৬৪ হাজার ৬৫৬ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে অনাহারে মারা গেছেন ৪০৪ জন। এ ছাড়া হাজার হাজার মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে।
লেবাননে হামলা
সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর ১টার দিকে পূর্বাঞ্চলীয় লেবানের বেক্কা এবং হারমেল জেলায় বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে পাঁচজন নিহত হয়। ইসরায়েল সেনাবাহিনীর দাবি, ওই অঞ্চলে হিজবুল্লাহর মজুদ রাখা অস্ত্রাগার এবং সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চলানো হয়েছে। যদিও বিষয়টি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি হিজবুল্লাহ। এ হামলার মাধ্যমে গত বছরের নভেম্বরে হিজবুল্লাহর সঙ্গে অনুষ্ঠিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির লঙ্ঘিত হয়েছে।
এ ছাড়া গতকাল মঙ্গলবারও লেবাননের বারজাতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এটি বৈরুত থেকে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। এতে হিজবুল্লাহর একজন সৈন্য নিহত হয়।
সিরিয়ায় হামলা
সোমবার রাতে সিরিয়ার একাধিক স্থানে হামলা চালায় ইসরায়েল। বিশেষ করে সিরিয়ার বিমানবাহিনীর ঘাঁটি, বাড়িঘর এবং মিলিটারি ব্যারাকের ওপর হামলা চালানো হয়। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরিয়ার মানবাধিকার পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এ তথ্য জানিয়েছে। যদিও এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, এটি আমাদের সার্বভৌমত্বের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং জাতীয় ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরিয়ার মানবাধিকার পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা জানিয়েছে, চলতি বছরে ইসরায়েল সিরিয়ার শতাধিক হামলা চালিয়েছে। যার মধ্যে ৮৬টি বিমান হামলা এবং ১১টি স্থল অভিযান। এতে ১৩৫টি স্থাপনা ধ্বংস এবং ৬১ জনকে হত্যা করা হয়।
ইসরায়েলের হামলা থেকে বাদ যায়নি গাজার উদ্দেশে রওনা দেওয়া দ্য গ্লোবার সমুদ ফ্লোটিলার জাহাজও। তিউনিশিয়ার উপকূলে দুবার ইসরায়েলি ড্রোন হামলার শিকার হয় সমুদ্র ফ্লোটিলার জাহাজ।
কাতারে হামলা
ইসরায়েল থেকে কাতারের দূরত্ব দুই হাজার কিলোমিটার বা ১ হাজার ২৪৩ মাইল। গাজায় ইসরায়েলি হামলার পর এই প্রথম কাতার তাদের লক্ষ্যবস্তু হলো। এতে ছয়জন নিহত হয়।
ইসরায়েল সেনাবাহিনীর জানিয়েছে, ওয়েস্ট বে লাগন এলাকাতে একটি আবাসিক ভবনে তারা এই হামলা চালিয়েছে। এখানে অনেক দেশের দূতাবাস, স্কুল, সুপারমার্কেট এবং চিকিৎসা কেন্দ্রে রয়েছে।
ইয়েমেনে হামলা
এদিকে বুধবার ইয়েমেনের রাজধানী সানায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গত এক মাসের মধ্যে এদিন দ্বিতীয়বার সানার বিমানবন্দরে হামলা চালানো হয়। এর আগে গত ৬ মে মাসে সানা বিমানবন্দরে হামলা চালানো হয়। ওই সময়ে টার্মিনাল ভবন এবং রানওয়ের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
এ ছাড়া গত ২৮ আগস্ট রাজধানী সানায় হুতি সরকারি কর্মকর্তাদের একটি বৈঠকে হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে হুতি প্রধানমন্ত্রী আল-রাহাওয়িসহ আরও কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তা নিহত হন।