আগামী ১৩ নভেম্বর শেখ হাসিনার সাজা ঘোষণা করবে আদালত। ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি গোলাম মোর্তূজা মজুমদার গত মাসে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।
এমন পরিস্থিতিতে হাত গুটিয়ে বসে নেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা। তারা মাঠে-ময়দানে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে দেখা যাচ্ছে আওয়ামী লীগের মিছিল। হাজার হাজার আওয়ামী লীগ সমর্থক সেইসব মিছিলে যোগ দিচ্ছেন সরকারের ভয় উপেক্ষা করে।
তবে আওয়ামী লীগ নেতারা সাজা ঘোষণার আগেই আরও বড় আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ১০ নভেম্বর থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ, মিছিল এবং প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ। আর ১৩ নভেম্বর ঢাকায় লকডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব। ওইদিন ঢাকায় অফিস-আদালত, দোকানপাট, যানবাহন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কলকারখানা বন্ধ রেখে প্রতিবাদে অংশ নিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের তরফে। সেই লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারও চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীদের ঢাকায় জড়ো হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের দাবি, দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার, ইউনুসের পদত্যাগ এবং অবৈধভাবে পরিচালিত আইসিটি আদালত বন্ধ করতে হবে।
আওয়ামী লীগের এক নেতা জানিয়েছেন, এবার তারা ধর্মঘট শব্দ ব্যবহার না করে লকডাউন শব্দটি ব্যবহার করছেন। কয়েক বছর আগে করোনা মহামারির সময় লকডাউন দেখেছিল বিশ্বের অধিকাংশ দেশ। স্তব্ধ হয়েছিল জনজীবন, চারদিকে নেমে এসেছিল নীরবতা, নিস্তব্ধতা। এবার তারা প্রতিবাদ হিসেবে মানুষকে ঘরে থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন। এটি হবে ইউনুস সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের চরম দিন।
আওয়ামী লীগের সমর্থকদের দাবি, জঙ্গি ও মব সন্ত্রাসের জনক, অবৈধ ও অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলকারী, অর্থ ও ক্ষমতালোভী ফ্যাসিস্ট ইউনুসের পদত্যাগ, অবৈধ আইসিটি আদালতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহার আর সব রাজবন্দীর মুক্তি। এসব দাবিতে ১৩ নভেম্বর ঢাকায় লকডাউন পালন করা হবে।
তারা বলছেন, ওইদিন অফিস-আদালত, দোকানপাট, যানবাহন ও কলকারখানা বন্ধ রাখুন। ইউনুসকে পদত্যাগে বাধ্য করুন।
শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর থেকে দলের নেতা-কর্মীরা পুলিশের নিশানায় রয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তার করে রাখা রয়েছে বিভিন্ন জেলে। প্রশাসনের এই অতি সক্রিয়তায় অসন্তুষ্ট জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন। কমিশনের তরফে ইতিমধ্যে ইউনুস সরকারকে একটি কড়া চিঠিও দেওয়া হয়েছে। আর সেই চিঠির বিষয়বস্তু হচ্ছে, আওয়ামী লীগের যেসব নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগের সপক্ষে প্রমাণ দিতে হবে। প্রমাণ দিতে না পারলে অবিলম্বে তাদের জেল থেকে ছেড়ে দিতে হবে।
চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের কথাও। নির্বাচন যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু হয়, তার জন্য সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ। আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেবে না কোনো আন্তর্জাতিক মহল।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের লকডাউন কর্মসূচির বিষয়ে সজাগ রয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। সেদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তর থেকেও দেওয়া হয়েছে বিশেষ নির্দেশ।
বাংলাদেশ পুলিশের বক্তব্য, ১০ নভেম্বর থেকেই ঢাকার প্রবেশপথ, আবাসিক হোটেল, মেস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তল্লাশি ও বিভিন্ন অভিযান শুরু করবে পুলিশ।




